মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৩ পিএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আটক ৩

সিলেটে ভাঙচুর-লুটপাট। ছবি : কালবেলা
সিলেটে ভাঙচুর-লুটপাট। ছবি : কালবেলা

সিলেটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (৭ এপ্রিল) রাত পৌনে ৯টার দিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক।

আটকৃতরা হলেন, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ভাটি পাড়া এলাকার মো. রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন, সুনামগঞ্জের হাছানগর ও কাজীটুলার আরব আলী ছেলে ইমন (১৯), কাজীটুলার দ্বীন ইসলামের ছেলে মো. রাকিব (১৯)।

সোমবার রাত ১০ টায় পুলিশের যৌথ মহড়াতে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর ও প্রশাসন) মো. মাসুদ রানা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. বশির আহমেদ, উপ-পুলিশ (উত্তর) শাহরিয়ার আলম, কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার(উত্তর) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালানোর প্রতিবাদে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা কেএফসি, বাটা, ইউনিমার্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকা তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা সাপেক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টহল ও অভিযান অব্যাহত আছে।

এর আগে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ‘ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ জনতা। এ সময় ইসরায়েলি কোমল পানীয় রাখার অভিযোগে কেএফসির রেস্টুরেন্টে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরে নগরীর দরগাহ, জিন্দাবাজার, বন্দর বাজারসহ ৪টি বাটা শোরুমে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকায় রয়েল মার্ক ভবনের দুই তলায় থাকা কেএফসিতে দুই দফা হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে কেএফসিতে এ হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নগরে বের হওয়া মিছিলের একটি অংশ বেলা আড়াইটার দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসিতে হামলা চালায়।

এ সময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চলে। কেএফসির ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ফ্রিজে এবং স্টকে থাকা পেপসি, সেভেনআপ, মাউন্টেন ডিউসহ শত শত বোতল কোমল পানীয় রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়। পরে ভবনে থাকা হোটেল রয়েল মার্কের রিসিপশন এরিয়া ও তৃতীয় তলার সাফরা রেস্টুরেন্টেও হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যান।

বিক্ষোভকারীরা জানান, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাকারী ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই হবে না এ দেশে। এই কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইসরায়েলি বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। ফিলিস্তিনি ভাইদের রক্ষা করতে বাংলাদেশের কোটি কোটি জনতা প্রস্তুত রয়েছে। চলমান হামলা শুধু একটি অঞ্চলের নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রতি আঘাত। এই অমানবিকতা বন্ধে বিশ্বনেতাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।

সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তিপ্রিয় ধর্ম। ইসলাম অশান্তির কাজকর্ম সমর্থন করে না। ফিলিস্তিনি নিরীহ মুসলিমদের হত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন এবং মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে সমগ্র বিশ্বে আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বাংলাদেশেও রাজপথ থেকে শুরু বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা সিলেটের ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের ঘোষণা দিয়েছি। এরই ফাঁকে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা কেএফসি, বাটাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছে। সেটা সিলেটের মানুষ ও তৌহিদি জনতা সমর্থন করে না, আমরাও সমর্থন করি না। আমি সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সিলেটেরই কোনো না কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন। আপনারা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করবেন না। বরং আপনারা ইসরায়েলের পণ্য বয়কট করুন। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর না করে প্রয়োজনে তালাবদ্ধ করে রাখুন, তবুও কোথাও ভাঙচুর চালাবেন না।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, গাজায় চলমান হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিলেটের তৌহিদি জনতা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে। আমরা পুলিশ প্রশাসন সেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুসল্লিদের সহযোগিতা করেছি। হঠাৎ পেছন থেকে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ কেএফসিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কেএফসির গ্লাস এবং ভেতরে প্রবেশ করে ফার্নিচার ও মালামাল ভাঙচুর চালায়। আমরা বিক্ষুব্ধ জনতাকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্র প্রতিনিধিদের এখন সরকার থেকে পদত্যাগ করা দরকার : ভিপি নুর

উত্তরা থেকে তুরিন আফরোজ গ্রেপ্তার

থানা নিরাপত্তা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বিল্লাল এখন রিমান্ডে

শোরুমে হামলা নিয়ে বাটার বিবৃতি

ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : প্রিন্স

সড়ক নির্মাণে বিএসএফের বাধা

বানরের রুটি ভাগের খেলায় মেতেছেন আরবের শেখরা

শাহ আমানত বিমানবন্দরে কোটি টাকার সোনা জব্দ

বিতর্কিতদের নিয়ে খুলনায় বিএনপির কমিটি, তৃণমূলে ক্ষোভ

সিলেটসহ অন্যান্য স্থানে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ

১০

৮ জেলায় তাণ্ডব

১১

বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিলেন ইউএনও

১২

বন্ধুকে নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণচেষ্টা, অতঃপর...

১৩

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়িতে হামলা, ৬ দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

১৪

টঙ্গীতে ছুরিকাঘাতে পোশাক শ্রমিক নিহত, গ্রেপ্তার ১

১৫

চট্টগ্রামে জোড়া খুন, ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার আরও একজন

১৬

‘স্বাধীনতা কনসার্ট’ স্থগিত

১৭

সিইপিজেডে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

১৮

শান্ত-মিরাজদের ফিল্ডিং কোচ প্যামেন্ট

১৯

গাজার জন্য প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে মাশরাফীর স্ট্যাটাস

২০
X