কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার ২৩ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থী এসএসসিতে অংশগ্রহণ করছে না। আগামী বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
যদিও বোর্ডের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর গত বছর থেকে পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১৩ হাজার ৭৪৮ জন। বিজ্ঞান বিভাগেও শিক্ষার্থী কমছে। এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি। লেখাপড়ায় ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মো. কবীর উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, যারা এসএসসির ফরম পূরণ করেনি তাদের অধিকাংশই স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। একাধিক বিষয়ে শুধু ফেল নয়, খুব বেশি নম্বর কম পাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ফরম পূরণে অনুমতি দেয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তারা পরীক্ষায় অংশ নিলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এতে স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বাঁধার মুখে পড়ে।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ ড. নিজামুল করীম কালবেলাকে বলেন, শিক্ষায় মনোযোগ সামগ্রিকভাবে কমে গেছে। ছেলেরা ব্যস্ত মোবাইল ও হুন্ডায়। সোশ্যাল মিডিয়া, সোশ্যাল প্ল্যাটফরম ব্যাপক ও বিস্তৃত হচ্ছে। এর নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে আসক্তি ও ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দিন দিনই বাড়ছে। উঠতি বয়সী অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় তাই মনোযোগ হারাচ্ছে। ফলে তারা স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় খুবই খারাপ ভাবে অকৃতকার্য হচ্ছে, আর ঝরে পড়ছে।
তিনি বলেন, একটা অংশ আবার ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তারা পরীক্ষা পেছানোর দাবিও তুলেছে। সব মিলে পরীক্ষা সঠিক সময়ে নেওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, একথাও সত্য বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রেণি শিক্ষার দারুণ বিঘ্ন ঘটেছে। শ্রেণি শিক্ষার গুণগত মান ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের বিষয়টি। এটি ফিরিয়ে আনতে হবে। এমন পরিবেশ লাগবে।
তিনি বলেন, ছেলেদের পিছিয়ে পড়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে সামগ্রিক অমনোযোগীতার প্রভাব পড়েছে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার ক্ষেত্রেও। গ্রাম ও শহরে শিক্ষায় বৈষম্য বিদ্যমান। সব মিলে গবেষণা ও কারণ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা দরকার। তাতে প্রতিকার বেরিয়ে আসবে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। কারণ চিহ্নিত করার মতো তথ্য ও উপাত্ত ঠিক সেভাবে আমাদের কাছে নেই।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল হাফিজ জানান, ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হওয়ার বড় কারণ কিন্তু গ্রাম এলাকা। শহর ও গ্রামে শিক্ষা প্রাপ্তির বৈষম্য রয়েছে। গ্রামে মেয়েদের আগে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতাতো আছেই। আবার ফলাফলে কিন্তু মেয়েরা এগিয়ে, পাসের হারেও এগিয়ে।
উল্লেখ্য, ছয় জেলা- কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর নিয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। এবার বোর্ডের ৬ জেলার ২৭৩ কেন্দ্রে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। যার মধ্যে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী আছে ২৬ হাজার ২১৫ জন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়ে ৯৯ হাজার ৫৩০ জন আর ছেলে ৭০ হাজার ১৫০ জন। ছেলেদের তুলনায় মেয়ে পরীক্ষার্থী ২৯ হাজার ৩৮০ জন বেশি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৫৯ হাজার ৩৬৬ জন, মানবিক বিভাগে ৫৫ হাজার ৬৫২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫৪ হাজার ৬৬২ জন।
মন্তব্য করুন