আত্রাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়বাসী। বর্ষাকালে নৌকা এবং শুকনো মৌসুমে ৫০০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে চার জেলার লক্ষাধিক মানুষ। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি এলেও এলাকাবাসীর আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয়নি।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের জয়গঞ্জ গ্রামের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। উত্তরাঞ্চলের অনেক নদী খননের অভাবে নাব্য হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হলেও বর্ষায় আত্রাই নদী খরস্রোতা হয়ে ওঠে। খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর বেশির ভাগ অংশ শুকিয়ে গেছে। তবে নদীর যে অংশে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, তার ওপর দিয়ে প্রায় ৫০০ ফিট দীর্ঘ এক বাঁশের সাঁকো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খানসামার জয়গঞ্জ ঘাটের ইজারাদার মো. আনোয়ারুল ইসলাম ওই বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন। এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক, কর্মজীবী নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা পার হচ্ছে। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান ও মোটরসাইকেলেও চলাচল করে। তবে ভরা মৌসুমে নদীর পানি বেশি থাকলে মানুষ নৌকায় চলাচল করে।
এলাকাবাসী জানান, এখানে একটি সেতুর জন্য বিগত সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে বহুবার আবেদন করেও লাভ হয়নি। বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য প্রার্থীরা সেতুটি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেতু নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ নেননি কেউই।
জয়গঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নদীটির ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় পারাপার হতে হয়। সারাবছরই মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পথে পারাপার করেন।
বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা শুকুর আলী বাসসকে বলেন, ‘জন্ম থেকে শুনে আসছি এখানে সেতু নির্মাণ করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের এমপির কাছে একটি সেতুর জন্য কত আন্দোলন, কত মানববন্ধন করেছি আমরা। ভোট এলে জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দেয়, সেতু তৈরি করে দেবে। কিন্তু ভোটের পর কারও কোনো খবর থাকে না। আওয়ামী লীগের পতন হয়ে গেল, কিন্তু আত্রাই সেতু হলো না।’
ঝাড়বাড়ি-জয়গঞ্জ খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন বলেন, ‘এখানে একটি সেতু হলে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। এতে সহজ হয়ে উঠবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্য। কৃষিখাতসহ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভ’মিকা রাখবে। একটি সেতু নির্মাণের অভাবে এলাকার লোকজন পিছিয়ে পড়ছে। পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরাও তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণে জনপ্রতিনিধিরা আশার ফুলঝুড়ি ছড়ালেও স্বাধীনতার ৫৪ বছরে নির্মিত হয়নি সেতুটি। সাবেক এমপি, মন্ত্রীর কাছে ধরনা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। এমনকি সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দিনাজপুর জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। অবশ্য এর আগে খানসামা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্থানটি পরিদর্শন ও জরিপ করা হয়েছিল।’
আত্রাই সেতু নির্মাণের দাবি এখন এই এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণের দাবি। জন দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হলে এলাকাবাসীর কাছে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সেতু নির্মাণের বিষয়ে খানসামা উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, এখানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য ঢাকা থেকে আমাদের একটি ডিজাইনও পাঠিয়েছিল। আমরা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবারও ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর কোনো নির্দেশনা আসেনি।
মন্তব্য করুন