চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত একশ কিলোমিটার মার্চ ও এপ্রিল এ দুই মাস মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম। এর মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরার ব্যাপারে সরকার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
কিন্তু মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে চলছে মাছ শিকার। দিনে নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেলেও রাতে মেঘনা নদী থাকছে মৎস্য শিকারি জেলেদের দখলে।
উপজেলার ষাটনল মালোপাড়া সংলগ্ন বাজারে জাটকা বিক্রি হতে দেখা যায়। দুপুরে আমিরাবাদ মৎস্য আড়তেও জাটকা বিক্রি হতে দেখা যায়। নদীতে শতাধিক জেলে নৌকায় বসে পরিষ্কার করছেন জাল। মাছের আড়তে চলছে পাইকারি বেচাকেনার মহোৎসব। নদীতে কিছু ট্রলারে পাইকাররা মাছ নিয়ে উঠছেন নিজ নিজ বাজারে এগুলো বিক্রির জন্য।
এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের আকবর আলী ও কালাই মিয়ার ট্রলার ছিল পাইকারে ভরপুর। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতার ভিড়, অটোগাড়িতে ঝুড়ি ঝুড়ি জাটকা মাছ। অস্থায়ী এই হাট নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। উপজেলার সর্ববৃহৎ মাছের আড়ত আমিরাবাদ ও ষাটনলের বাবুবাজার মৎস্য আড়তে দেখা যায়, আড়তে অসংখ্য পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহল। মাছ বেচাকেনার দামদরের কাজে ব্যস্ত সবাই। খানিকটা দূরে অপেক্ষমাণ কয়েকটি পিকআপ ভ্যান এবং নদীরপাড়ে ট্রলার। মাছ নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার অপেক্ষায়। একটি ঘরে বরফের স্তুপ। মাছগুলো বরফজাত করার জন্য যা প্রতিদিন সকালে মজুদ করা হয়।
মতলব উত্তরের ইসমাইল, মালেক ব্যাপারী, আরশাদ প্রধানসহ একাধিক জেলে জানান, আমরা মৎস্য অফিসের ইমান আলীর মাধ্যমে উপজেলা মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে প্রতি নৌকায় ২০ হাজার টাকা দিয়ে টোকেন নিয়েছি। টোকেন ছাড়া নদীতে মাছ ধরতে নামলে আমাদের জেল-জরিমানা করে।
উপজেলার ষাটনল এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা ফুলচান বর্মণ জানান, পর্যাপ্ত সুবিধা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ সময়মতো জেলেদের দিতে পারলে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহজ হতো।
মোহনপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, আমার ফোর্স কম; তাই রাতে অভিযান পরিচালনা করতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।
এখলাসপুর, আমিরাবাদ, বাবুবাজার এবং কালিরবাজার আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিরা বলেন, মাছ না ধরলে মানুষ না খেয়ে মরবে। জেলেরা আছে খুবই অভাব-অনটনে। জাল দিয়ে মাছ ধরে চলে তাদের সংসার। তাই আমরা সবকিছু ম্যানেজ করেই বাজার চালিয়ে যাচ্ছি।
মোহনপুর কোস্টগার্ড ক্যাম্পে কথা হলে জানা যায়, নদীতে আপনি এখনো জেলে নৌকা পাবেন; কিন্তু আমরা কী করব? মূলত আমরা তো নৌপুলিশ ফাঁড়িকে সাহায্য করতে আসছি।
মতলব উত্তর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস কালবেলাকে বলেন, আমরা নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যারা আইন অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, জেলেরা আমাদের নামে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তা সঠিক নয়।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি কালবেলাকে জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, তবে মৎস্য বিভাগকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
মন্তব্য করুন