গত ২৪ মার্চ বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং শ্রমিকদের আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। এরপর আসামি ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশের (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) ডিবি পুলিশ। কৌশলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে তারা।
শনিবার (৫ এপ্রিল) গভীর রাতে ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মুরাদনগরের বেশকিছু বিএনপি নেতাকর্মী। তাদের দাবি, একে তো মিথ্যা মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে, উপরন্তু আসামি ধরার নামে ডিবি পুলিশ ভোররাত পর্যন্ত মুরাদনগরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজ করছে।
যদিও অভিযানের বিষয়টি সঠিক নয় বলে ডিবি পুলিশের দাবি। তবে পুলিশের এমন তৎপরতায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠায় যাচ্ছে তাদের সময়। পাশাপাশি পুলিশের তৎপরতায় সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত বলে জানা গেছে।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন জানান, কোম্পানীগঞ্জ বাজারের সিএনজি স্টেশনের সৃষ্ট ঘটনার জের ধরে মুরাদনগর উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২টি মিথ্যা মামলা করেন পুলিশ ও সমন্বয়করা। এরপর থেকেই থানা পুলিশের পাশাপাশি কুমিল্লা থেকে ডিবি পুলিশ এসে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে।
প্রতি রাতে সাদা পোশাকে পুলিশের সদস্যদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের শাসন আমলেও এমন ভীতিকর পরিবেশ ছিল না। কোনো অদৃশ্য কারণে পুলিশ এমন আচরণ করছে। ৫ আগস্ট যে পুলিশ ও থানা আগলে রেখেছি সেই পুলিশ এখন আমাদের দৌড়াচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ সিএনজিতে ওঠাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে উবাইদুল্লাহ হক সিদ্দিকী নামে একজনের বিতর্ক হয়। ওই ব্যক্তি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন আত্মীয় বলে পরিচয়ও দেন। তবুও ঘটনার একপর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। মূলত সিরিয়ালে সিএনজি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হলেও এই ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ তারিখে দুটি মামলা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কুমিল্লার মুরাদনগরে আবার যেন ফিরে এসেছে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী অবস্থা। রাতের বেলা তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। মধ্যরাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করে খোঁজা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাজারেও যেতে পারছেন না তারা।
তেমনি একজন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, রাত-বিরাতে ডিবি পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য আসে। প্রতিটা রুমে তল্লাশি করে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসে আমরা রাতে বাড়ি থাকতে পারছি না। ওপরের ইশারায় আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমার বাড়ির সামনে দিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করে বলে আমার স্ত্রী জানিয়েছে।
আরও কয়েকজন জানান, শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম মুরাদনগরে গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে। ফলে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা আগেই টের পেয়ে এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যান। এ নিয়ে তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে ঢাকা থেকে কুমিল্লা গিয়ে ডিবির অভিযান প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আমাদের অভিযান বিভিন্ন জায়গাতেই হচ্ছে। স্পেসিফিক বলতে পারছি না। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি ও হয়রানি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না’।
কুমিল্লা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ বলেন, ঢাকা থেকে গোয়েন্দা টিম এলে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাওয়া যাবে। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
মন্তব্য করুন