যমুনা নদীর ভাঙনে বসত ভিটা হারিয়ে সন্তানেরা যার যার মতো চলে গেলেও বাবা-মায়ের ঠাঁই হলো না পাঁচ ছেলের সংসারে। তাই নির্জন কবরস্থানের পাশে সড়কে ফেলে রেখে গেছে স্বজনরা। ঘটনাটি ঘটেছে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সম্ভুদিয়া কবরস্থান এলাকায়।
জানা যায়, চৌহালী উপজেলার দুর্গম উমারপুর ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদ মোল্লা (৮৬) ও তার স্ত্রী ফজিলা খাতুনকে (৭৭) দীর্ঘদিন পাঁচ ছেলে ভাগাভাগি করে ভরণপোষণ করে আসছিল। তবে যমুনার ভাঙনে তাদের বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় ছেলেরা একেক জায়গায় চলে যায়। শুরু হয় বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিয়ে জটিলতার। পাঁচ ছেলের কার বাড়িতে থাকবে বাবা-মা এ নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। কিন্তু সর্বশেষ কোথাও ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২ মাস আগে সেজ ছেলের বউ মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে হাঁপানিয়া চরে পাঠিয়ে দেয় শ্বশুর-শাশুড়িকে। পরে ভাগ্নের বাড়িতে কিছু দিন আশ্রয় পেয়েছিলেন তারা। কিছু দিন যেতে না যেতেই তারাও অবহেলা করতে থাকে। একপর্যায়ে কয়েকদিন আগে পাশের বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামে বৃদ্ধদের মেয়ের বাড়ির সংলগ্ন সম্ভুদিয়া কবরস্থানে কাউকে না জানিয়ে রেখে যায় স্বজনরা।
পরে ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কান্নাকাটি দেখে স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে কথা বলে। এ সময় তারা জানান, এখানে তার মেয়ের বাড়ি। খবরটি পেয়ে বৃদ্ধার মেয়ে মনোয়ারা খাতুন এসে বাড়িতে নিয়ে যায়। এদিকে বৃদ্ধর মেয়ে স্বামীহারা হয়েছেন অনেক দিন আগে। এখন স্বামী হারা মেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে পড়েছে বিপাকে। ওই মেয়ের পক্ষে তাদের ভরণপোষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি নিজেই স্বামী হারা। এখন সন্তানদের সংসারে থাকি। আমার পাঁচ ভাইয়ের কেউ বাবা মাকে ভরণপোষণ দিবে না। এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সম্পদ যা ছিল সব ভাইয়েরা বিক্রি করে দিয়েছে। কয়েক দিন আগে আমার বাড়ির পাশে ভাইয়েরা কিছু না জানিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। অভাব অনটনের সংসারে বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা মাকে ভরণপোষণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম মোল্লা জানান, বৃদ্ধ দম্পতিকে দেখতে গিয়েছিলাম। কবরস্থানের পাশে তারা রয়েছে। তাদের নিজ বাড়ি উমারপুর ইউনিয়নে হলেও মেয়ের বাড়ি বাঘুটিয়া। তাদেরকে সকল সহায়তা করা হবে।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা এমন খবরটি পাওয়ার পর স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সবরকম সহায়তা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই ওই বাবা-মাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহয়তাসহ একটি সুন্দর ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন