ঋতুচক্রে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বিভিন্ন রকম ও রংয়ের ফুল ফোটে। এসব ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এমনই এক চোখজুড়ানো ফুল মেঘশিরীষ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি মাতাচ্ছে। অযত্নে ফোটা এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষ। মেঘশিরীষ ফুলের মনমাতানো সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে।
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকের কলমেও উঠে এসেছে শিরীষ ফুলের সৌন্দর্য। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘শিরীষ-গাছে পেঁচা ডাকছে বুঝি/অন্ধকারের ভিতর কেমন শিরশির মধুরতা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তার কবিতায় শিরীষ ফুলকে তুলে এনেছেন এভাবে, প্রাঙ্গণে মোর শিরীষশাখায় ফাগুন মাসে কী উচ্ছ্বাসে, ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুপাশে, নদী, খাল ও জলাশয়ের পাড়ে মেঘশিরীষ গাছে চোখজুড়ানো ফুল ফুটে আছে। আসা-যাওয়ার পথে এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সব বয়সী মানুষকে আকৃষ্ট করছে। সবুজ পাতার মাঝখানে ফুটে থাকা গোলাপি ও সাদা রংয়ের মিশ্রিত নয়নাভিরাম ফুল প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
জানা গেছে, মেঘশিরীষ ঝোপালো শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম আলবিজিয়া সামান। এর ফুল দৃষ্টিনন্দন। ফুলের রঙ গোলাপি ও সাদার মিশেল। ফুলের আকৃতি গুচ্ছবদ্ধ। প্রতিটি গুচ্ছে অনেকগুলো ফুল ফোটে। এ ফুলের সৌন্দর্য বিকীর্ণ পরাগ-কেশরে নিহিত। এ ফুলের অগ্রভাগ গোলাপি ও নিচের অংশ সাদা। এ ফুলে মৃদু গন্ধ রয়েছে। এটি মেষশিরীষ ছাড়াও বিলাতি শিরীষ, বুনো শিরীষ, রেইন ট্রি, রেইন ট্রি কড়ই, রেন্ডি কড়ই বা চটকা নামেও পরিচিত। গ্রামীণ সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের দুপাশে এ গাছ বেশি দেখা যায়। শিরীষের অনেকগুলো প্রজাতির মধ্যে মেঘশিরীষ গাছের সংখ্যাই বেশি। মেঘশিরীষ বাতাস দূষণ কমাতে সাহায্য করে। গাছটিতে ফুল এলে মেঘের মতো দেখায় বলে এটিকে মেঘশিরীষ বলা হয়।
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী মাইমুনা রহমান বলেন, আমাদের উপজেলার বিভিন্ন সড়কে আসা-যাওয়ার পথে নজর কাড়ছে মেঘশিরীষ ফুলের সৌন্দর্য। উঁচু গাছের ছড়ানো ডালপালায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে থাকা রঙিন ফুল প্রকৃতিকেও যেন রঙিন করে তুলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুপাশে সরকারিভাবে লাগানো গাছগুলোর মধ্যে রেন্ডি কড়ই (মেঘশিরীষ) গাছের সংখ্যাই বেশি। এজন্য এ গাছে ফুল ফুটলে সহজেই চোখে পড়ে। এর ফুলও আকৃষ্ট করে। তবে নতুন করে এ গাছ আর লাগানো হচ্ছে না। পুরনো গাছগুলো দিন দিন কমে আসছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, এ দেশে শিরীষের কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে, তবে এর মধ্যে মেঘশিরীষ গাছের সংখ্যা বেশি। এ গাছের ফুলও বেশ সুন্দর। শিরীষ মূলত কাঠ গাছ হলেও এর ঔষধি গুণ রয়েছে। এই গাছের মূলের ছাল ও গাছটির ফলের বীজ নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি প্রকৃতিবান্ধব গাছ। এটি ঝড়ের কবল থেকেও রক্ষা করে থাকে।
মন্তব্য করুন