জামায়াতে ইসলামীর আমির ও কুলাউড়ার কৃতি সন্তান ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এমন একটা দেশ দেখতে চাই যেখানে চাঁদাবাজ, ঘুষখোর ও সুদখোরদের ঠাঁই হবে না। যেখানে আল্লাহর আইন, মানবতার আইন ও মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা এমন একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, জন্মস্থানের একটা মায়া, একটা ভালোবাসা আছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আপনাদের সামনে ২৪ বছর পর কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কুলাউড়ার মানুষ যেভাবে চেনে অন্য কেউ সেভাবে চেনে না। আমি কি যুদ্ধাপরাধী? না। অথচ আমার ওপর যুদ্ধপরাধের মামলা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। সাড়ে ১২ বছরের মানুষ যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষ খুন করতে পারে- এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা? চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি। হিন্দু ভাইয়েরাও তাতে রাজি হয়নি। আমি সেই সময় জামায়াতে ইসলামীও করতাম না। আমি অন্য একটা সংগঠন করতাম। যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়। নতুন বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শহীদদের হত্যার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে আমাদের লড়াই এখনও চলছে। এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত জালিম সরকারের আমলে আমরা ১১ জন শীর্ষ সহকর্মীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হারিয়েছি, ৫ শতাধিক মানুষ পঙ্গু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হামলা-মামলার শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। আগস্টের ১ তারিখ আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় আল্লাহকে বলেছিলাম, ৪ দিন পর আল্লাহর বিচার হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। জালিমের মাথা আল্লাহ গুড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২৬ লাখ কোটি টাকা শুধু আওয়ামী লীগের নেতারা পাচার করেছে। প্রশাসন কত টাকা পাচার করেছে আল্লাহই ভালো জানেন। তাদের ভাব ছিল এমন যে- তারা রাজা, আর আমরা প্রজা। ওই সরকার কারো সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি। ৭ বছরের শিশুও আন্দোলন করেছে। এক মা দুধের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে আন্দোলনে এসেছেন। সন্তানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য তিনি আন্দোলনে নেমেছিলেন বলে সাংবাদিকদের বলেছেন। এটা ছিল জুলাই বিপ্লব।
ডা. শফিক বলেন, আমি যেসব শহীদের বাড়ি গিয়েছি, তাদের জিজ্ঞেস করেছি কেমন আছেন, তারা শুধু টপটপ করে চোখের পানি ফেলেছেন। জানতে চেয়েছিলাম- কী চান? তারা বলেছিলেন, জালিমের হাতে দেশটা যেন আর না যায়। দেশটা আপনাদের হাতে দেখতে চাই। আপনাদের চাওয়াও কি এক? যদি এক হয়, তাহলে লড়াই আমাদের শেষ না, লড়াই শুরু। শহীদের পরিবারের চোখের পানি যতদিন- আমাদের লড়াই মাত্র শুরু, এই লড়াই চলবে ততদিন। যতদিন এই দেশে আল্লাহর আইন, মানবতার আইন, মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত না হয়।
তিনি বলেন, কুলাউড়া উপজেলায় ৩৪ চা বাগান রয়েছে। তারা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন। আমরা আগেও দাবি তুলেছি যেন শ্রমিকদের ন্যায্য মুজুরি নিশ্চিত হয়। আমরা তেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি চাই না, যাদের ভেতর মানুষত্ব নেই। আমরা চাই প্রকৃত মানুষ। যারা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন, তাদের প্রয়োজন। আমরা একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে হিন্দু-মুসলিম কিংবা মেজরিটি-মাইনরিট বলে কিছু থাকবে না। দুঃশাসন এবং জুলুমের কারণে আপনাদের মুখ দেখতে পারিনি। আজ প্রাণখুলে দেখতে চাই।
ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগরীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা আমির সিরাজুল ইসলাম মতলিব, অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ঢাকা পল্টনের আমির শাহিন আহমদ খান, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন