গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদল নেতাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ দুই গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় পৃথক চারটি অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে সোমবার (৩১ মার্চ) দুই গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মোক্তাদির আহমেদ লিপু মোল্লার অনুসারী মতি এবং টঙ্গী থানা যুবদলের সাবেক ১ নম্বর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম কামুর অনুসারী সাগরের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। এরই জেরে সোমবার উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রথমে সাগর মতিকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মতি দলবল নিয়ে সাগরের বাড়িতে হামলা চালান। সাগরকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও কন্যাসন্তানকে মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে সাগর ঘটনাস্থলে গেলে মতি ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় সাগরের অনুসারীরা এগিয়ে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন- ডিম ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন (৩৮), তার স্ত্রী শারমিন (২০), ইমরান (২৭), মোহাম্মদ সাগর (৩০), আব্দুস সামাদ, মোহাম্মদ সাকিব (২২), নুরুল ইসলাম, মুক্তা আক্তার (৪০), সৌরভ (৪), মিন্টু (৩২) ও আশেক (৫৪)। গুরুতর আহতরা হলেন- মনির (৫৪), শিশু লামিয়া (৭) এবং বিপ্লব (২২)।
এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় উভয়পক্ষের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মোক্তাদির আহমেদ লিপু মোল্লা, টঙ্গী থানা যুবদলের ১ নম্বর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম কামু, মতি, ভাইগনা রুবেল, বিপ্লব, রাশেদ (৩৫), ৪ ব্লকের সিদ্দিক মিয়ার স্ত্রী মায়া (৬০), ২ নম্বর ব্লকের সোহেল (২২), একই ব্লকের মনসুর মিয়ার ছেলে শুভ (২০), মনসুর (৬০), ১ নম্বর ব্লকের মুনসুর আলীর ছেলে মানিক (৪০) ও তার স্ত্রী পারুল (৩৫), শাহ আলম (৪৫), পারভিন (৪৫), সালাম (২০), সাগরসহ (২৫) আরও বেশ কয়েকজন।
মুক্তা আক্তার বলেন, লিপু মোল্লার নেতৃত্বেই এ হামলা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সাগর বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই লিপু মোল্লার অনুসারীরা হামলা চালিয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
বিপ্লব বলেন, কামরুল ইসলাম কামুর নির্দেশেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি চাইছেন এলাকায় নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে।
মতি বলেন, কামরুল ইসলাম কামুর লোকজনই আমাদের ওপর প্রথমে হামলা চালিয়েছে। আমরা শুধু আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জানা যায় তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। পরে টঙ্গী পঞ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি প্রভাষক বশির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বিএনপি কখনো সংঘাতের রাজনীতি করে না। যদি কেউ মাদক বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকে, বিএনপির চেয়ারপার্সনের নির্দেশে ঘটনা তদন্ত করে যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, সেই ক্ষেত্রে সাংগঠনিক পর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোক্তাদির আহাম্মেদ লিপু মোল্লা ও কামরুল ইসলাম কামু বলেন, উক্ত ঘটনার সময় আমরা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় পৃথক চারটি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর রাতে এরশাদ নগরে আধিপত্য বিস্তারের জন্য ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কামরুল ইসলাম কামু গ্রুপ এবং মোক্তাদির আহাম্মেদ লিপু মোল্লা ও আনোয়ার মোল্লার গ্রুপের মধ্যে। সেই ঘটনার পর একাধিকবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযানে বেশ কিছুদিন নিয়ন্ত্রণে ছিল এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তবে বর্তমানে আবারও এই দুই গ্রুপের বিরোধে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।
মন্তব্য করুন