জামালপুরের মাদারগঞ্জে জমে উঠেছে ৭ দিনব্যাপী শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বালিজুড়ী ইসলামীয়া ঈদমেলা। প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিন এ মেলা শুরু হয়।
সোমবার (৩১ মার্চ) থেকে মেলা কেন্দ্র করে মাদারগঞ্জে উৎসবের আমেজ বইছে।
ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় কৃষিপণ্য, মাটির জিনিস, টেপা পুতুল, বাঁশ ও বেতের সাংসারিক জিনিস, বীজ, খেলনা, কসমেটিক, কাঠ ও লোহার আসবাবপত্র পাওয়া যায়। এ ছাড়া মেলায় জিলাপি, গজা, বাতাসা, সাজ, মুড়কি, মোয়া, রং-বেরঙের মিষ্টির দোকান বসেছে। এছাড়াও শিশুদের বিনোদনের জন্য হরেক রকমের আয়োজন করা হয়েছে। শুধু মাদারগঞ্জ পাশের উপজেলা ও জেলা সদর এবং অন্য জেলা থেকেও এই মেলায় ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। পাশের উপজেলা মেলান্দহের মাহমুদপুর থেকে আসা সদ্য বিবাহিত তরুণী কানিজা ফাতেমা বলেন, আমি প্রথমবারের মতো এ মেলাতে এসেছি। অনেক ভালো লেগেছে।
আরেক গৃহবধূ পারভীন আক্তার বলেন, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এই ঈদমেলায় আসতাম। এখন স্বামীর সঙ্গে এসেছি। বহুদিন পর এই মেলাতে এলাম। অনেক ভালো লেগেছে। মনে হলো সেই ছোটবেলায় ফিরে গেলাম।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী কাউসার বলেন, স্ত্রী-সন্তানদের আবদারে তারা মেলায় ঘুরতে আসবে। তাই তাদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এলাম। এদিকে মেলার প্রথম দিনেই বেচাবিক্রিতে খুশি ব্যবসায়ীরা।
মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী হালিম মিয়া বলেন, এরই মধ্যে বেচাকেনা জমে গেছে। গত বছরের চেয়ে এবার আরও ভালো ব্যবসা হবে।
মেলায় এবার ২০০টি স্টল বসেছে জানিয়ে ঐতিহ্যবাহী বালিজুড়ী ইসলামীয়া ঈদ মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব তালুকদার আল আমিন বলেন, মেলার প্রথম দিনে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। তারা বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী ও খাবার ক্রয় করছেন। শিশু বিনোদনের জন্য আমাদের আছে অনেক ধরনের ইভেন্ট। সবমিলিয়ে খুব উপভোগ করছে এ অঞ্চলসহ আশপাশের এলাকার মানুষ।
মেলাটির ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭শ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাঞ্চলে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের সময় সন্ন্যাসীরা যমুনার চরাঞ্চলের ঘাঁটি করে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতেন। ওই সময় তারা বগুড়ার গাবতলী মহিষাবানের গোলাবাড়ি এলাকায় গাড়িদহ নদীর পাড়ে বটতলায় একটি মন্দির এবং মাদারগঞ্জের বালিজুড়ি দহপাড়ায় বিলের ধারে একটি মন্দির স্থাপনের পর সন্ন্যাসী পূজা করতেন। এ উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হতো। ১৯২৫ সালে ঈদ ও পূজার মেলা একই দিনে হওয়ায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরুর উপক্রম হয়। তখন মুসলিম নেতারা বালিজুড়ি এফএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঈদুল ফিতরের দিনে ইসলামি ঈদমেলা শুরু করেন। সেই থেকে প্রতি বছর এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন