বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাহারায় ঈদ কাটে বনরক্ষীদের

পুরোনো ছবি।
পুরোনো ছবি।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা দেশ যখন উৎসবমুখর, তখন সুন্দরবনে কর্মরত বনরক্ষীরা তাদের পরিবার থেকে দূরে। একান্তভাবে বনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন-রাত নিরলসভাবে পাহারা দিচ্ছেন। ঈদের দিনেও তারা বনাঞ্চলে অবৈধ শিকার, গাছ কাটা এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করছেন, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না গিয়ে পরিবার-পরিজন ছেড়ে সুন্দরবন রক্ষায় কাজ করছেন বনরক্ষীরা। দেখা যায় শাকবাড়িয়া নদীতে বন টহলের জন্য ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন সুন্দরবনের গহিনে।

ওই ফরেস্ট স্টেশনের বনকর্মী মো. নজরুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের চাকরিতে প্রায় ঈদেই ছুটি মেলে না। বিশেষ করে রোজার ঈদে তারা বাড়িতে যেতে পারেন না। পরিবার ছাড়া ঈদ করা খুবই কষ্টের। তবে মানিয়ে নিতে হয়। এক সময় খারাপ লাগত। এখন আর তেমন কিছু মনে হয় না।

এ বনকর্মী আক্ষেপ করে আরও বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু শুধু বন বিভাগ সব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দুর্গম ও ভয়ংকর বনাঞ্চলে বনপ্রহরীদের সবসময় জীবনবাজি রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বেতন ছাড়া অন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তিনি সরকারের কাছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন ও ঝুঁকি ভাতা প্রদানের দাবি জানান।

কথা হয় সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের অধীনস্থ শাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়ির বনরক্ষী মো. জুয়েল রানার সঙ্গে। তিনি জানান, সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন করাটা আমাদের কর্তব্য। তাই দেশের সম্পদ রক্ষায় পরিবার-পরিজন ছাড়াই ঈদের দিনটাও কাটাতে হয়েছে গহিন সুন্দরবনে। ইট-পাথরের শহর আর গ্রাম-গঞ্জের সেই ঈদের আনন্দটুকু উপভোগ করতে না পেরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্বের ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় ঈদের দিনেও টহল কার্যক্রম করার পরেও আমরা খুশি।

শুধু জুয়েল রানা নন এমনভাবে ঈদের দিনটি কেটে গেছে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের প্রায় ৩ শতাধিক বন কর্মকর্তা-কর্মচারীর। তারা পরিবার-পরিজন ছাড়াই নির্জন পরিবেশে ঈদের দিনটি কাটিয়েছে। অতন্দ্র প্রহরী বন পাহারায় দিন-রাত কাজ করলেও আধুনিক যুগের কোনো সুবিধা নেই তাদের। তাই ঈদের দিনে সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা অন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো তারা যেন সব সুযোগ-সুবিধা পান।

সুন্দরবনের বিভিন্ন ফরেস্ট স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কয়েকজন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, সবাই একসঙ্গে ছুটিতে গেলে সুন্দরবনে নজরদারি করবেন কে? ঈদের দিন বনে থাকতে খারাপ লাগলেও সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদেরই।

তারা আরও জানান, এক বছর পরপর তাদের বদলির নিয়ম। সুন্দরবনের গহিনে হলেও মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের নেটওয়ার্ক আছে কোথাও কোথাও। মাঝেমধ্যে সেটা থেকেই যোগাযোগ হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে- এভাবেই কেটে যায় তাদের দিন ।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সীমিত করা হয়েছে সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বনকর্মীদের ঈদের ছুটি। এ ছাড়া সবাইকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। হরিণ ও বন্যপ্রাণী শিকার এবং অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সীমিত করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ছুটি দেওয়া হয়নি। বনকর্মীদের পরিবার ছাড়া ঈদ কাটাতে হয়েছে। ঈদের বিশেষ এ সময়টাতে শিকারিদের অপতৎপরতা বন্ধ এবং অগ্নি সন্ত্রাসীদের নাশকতারোধে রেঞ্জের সব স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের পূর্বে ও পরে বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় দিন-রাত কাজ করছে বন বিভাগের সদস্যরা।

সুন্দরবনের গেওয়াখালী বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, আমি সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জে প্রায় এক যুগ ধরে আছি। এর মধ্যে একবার মাত্র পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পেরেছি। গত বছর ঈদের সময় সুন্দরবনের এখানেই কর্মরত ছিলাম। গহিন বনের এই এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা রয়েছে। ঈদের দিন আমরা কয়েকজন স্টাফ মিলে একটা ব্রয়লার মুরগি আর একটু সেমাই রান্না করার ব্যবস্থা করেছি। তাতেই খুশি।

নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ঈদ আমাদের কাছে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আনন্দের সময় হলেও বনরক্ষীরা নিজেদের পরিবারকে ত্যাগ করে বনের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকতে বাধ্য। তারা চোরা শিকারিদের দমন, গাছ কাটা রোধ এবং বনজসম্পদের অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, আসলে বন বিভাগের স্টাফরা অনেক কষ্ট করে সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম

কারও ছুটি শেষ, কারও আবার আজ শুরু

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৭

সাতসকালে ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

দক্ষিণ চীন সাগরে নতুন তেলের খনি আবিষ্কার

লক্ষ্মীপুরে ৬ বছরের শিশু গুলিবিদ্ধ

মার্কিন-রুশ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে দ্বিতীয় বৈঠকের ভেন্যু নির্ধারণ

গাজায় নিহত আরও ৪২ ফিলিস্তিনি

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

০২ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

০২ এপ্রিল : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১১

তারেক রহমানের উপহার পেলেন শহীদ আইয়ুবের পরিবার

১২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গোষ্ঠীর ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ

১৩

স্বামীর কবর দেখতে গিয়ে ‘মারধরের’ শিকার জুলাই শহীদের স্ত্রী

১৪

বিএনপি কারও কাছে মাথা নত করেনি, করবে না : এ্যানি

১৫

ঈদে মামা বাড়ি বেড়াতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

১৬

‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই আর টিকবে না’

১৭

চাঁদপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ

১৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া

১৯

ঈদ মিছিল নিয়ে হেফাজতে ইসলামের বিবৃতি

২০
X