খুলনায় পুলিশ-নৌবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৩০ মার্চ) মধ্যরাতে নগরীর আরামবাগ এলাকার একটি বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার সময় টানা ৩ ঘণ্টা ধরে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীরা যৌথবাহিনীকে লক্ষ্য করে অনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ৭ পুলিশ এবং ১ নৌবাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন। এতে পুলিশ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ তার বাহিনীর ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে ৫/৬টি পিস্তল ও বিপুল সংখ্যক গুলি জব্দ করে পুলিশ।
রোববার (৩০ মার্চ) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার এক সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- পলাশ শেখ (৩৮), নুরে আলম সিদ্দিকী লিমন শরীফ (২৯), রুবেল ইসলাম লাভলু কালা লাচলু (৩৫), ইমরান হোসেন ট্যাটু ইমরান (৩৫), সৈকত রহমান (২৭), ফজলে রাব্বি রাজন (৩৬), রিপন (৩০), গোলাম রব্বানী (২৬), ইমরানুজ্জামান (৩৩), শহিদুল (৩৫)।
গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ৩টি পিস্তল, পিস্তলের ৪ রাউন্ড গুলি, ১টি শটগান, শটগানের ২৩ রাউন্ড গুলি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি, ১টি হাসুয়া, ২টি চাকু, ৪টা মোবাইল ফোন এবং ৭টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন কেএমপি কমিশনার জানান, নগরীর বানরগাতি আরামবাগ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে পুলিশ।
এরই প্রেক্ষিতে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ এবং নৌবাহিনী বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করে।
সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে ভবনের ছাদ থেকে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে পাল্টা শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ছাদ থেকে নেমে বিল্ডিংয়ের নিচে এসে পুনরায় গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও পাল্টা শটগানের গুলি ছোড়ে।
পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির মধ্যেই চারদিক থেকে বিল্ডিংটি ঘিরে ফেলে পুলিশ এবং বিল্ডিংয়ের ভিতর থেকে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ ৫ জনকে আটক করে।
এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা অন্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গুলাগুলির একপর্যায়ে আরও ৫ সন্ত্রাসীকে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক করা হয়।
থানার রেকর্ডপত্র যাচাই করে জানা যায়, সন্ত্রাসী পলাশের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের ১৪টি, তার মধ্যে ২টি হত্যা, ৩টি ডাকাতি, ১টি অস্ত্র, ২টি চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য ৬টিসহ মোট ১৪টি মামলা আছে। আসামি রুবেল ইসলাম লাভলু ওরফে কালা লাভলুর বিরুদ্ধে ১টি ডাকাতি, ১টি অস্ত্র, ১টি চাঁদাবাজি, ১টি পুলিশ অ্যাসল্ট ও অন্যান্য ৩টিসহ ৬টি মামলা আছে। আসামি নুরে আলম সিদ্দিকী ওরফে লিয়ন শরীফের বিরুদ্ধে ২টি, মো. ইমরান হোসেন ওরফে ট্যাটু ইমরানের বিরুদ্ধে ১টি, ফজলে রাব্বি রাজনের বিরুদ্ধে ১টি, মো. রিপনের বিরুদ্ধে ১টি, মো. ইমরানুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা আছে।
নিজেদের জান-মাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষারর্থে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে শটগানের ৪৭ রাউন্ড গুলি করে বলে জানায় পুলিশ।
উদ্ধার ৭টি মোটরসাইকেলের মধ্যে ৫টির নম্বরপ্লেট আছে এবং ২টি নম্বরপ্লেটবিহীন। ঘটনার সময় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় আসামিরা শারীরিকভাবে আহত হওয়ায় তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান কেএমপি কমিশনার।
মন্তব্য করুন