বরগুনাগামী একটি লঞ্চে স্টাফ ও যাত্রীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৬ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৫টায় এম ভি রয়েল ক্রুজ-২ ও রাজারহাট-বি দুটি লঞ্চে ওই ঘটনা ঘটে। পরে দলবদ্ধ হয়ে মব সৃষ্টি করে এ মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে রোববার (৩০ মার্চ) দুপুরে এম ভি রয়েল ক্রুজ-২ এর সুপারভাইজার এস এম খাইরুল হাসান শামীম বাদী হয়ে বেতাগী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৫টায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে ঈদুল ফিতরের বিশেষ সার্ভিস দিতে যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে এম ভি রয়েল ক্রুজ-২ ও এম বি রাজারহাট-বি।লঞ্চ। ঝালকাঠি ঘাট দেওয়া পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। ঘাট ছেড়ে বিষখালী নদীতে লঞ্চ চলমান অবস্থায় লঞ্চ কম গতিতে চলার অভিযোগ তুলে লঞ্চের যাত্রী মামলার ১ নম্বর আসামি রাসেলের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন যাত্রী দলবদ্ধ হয়ে মব সৃষ্টি করে এম ভি রয়েল ক্রুজ-২ এর মাস্টার, ইঞ্জিন ম্যানসহ স্টাফদের মারধর করেন। এ ছাড়া লঞ্চের ক্যান্টিন ও চায়ের দোকানে ভাঙচুর করে ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি করেন। সে সঙ্গে ক্যান্টিনে থাকা নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে টিকিট বই, টিকিট বিক্রয় বাবদ ক্যাশ টেবিলের ড্রয়ারে থাকা ২ লাখ টাকা ও ক্যাশ টেবিল বিষখালী নদীতে ফেলে দেয় আসামিরা। এ ঘটনা অপর লঞ্চ রাজারহাট-বি যাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মারামারি হয়। তবে রাজারহাট-বি লঞ্চের তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মোবাইল ফোনে ঘটনার বিষয় বেতাগী থানায় জানালে লঞ্চ স্টাফদের সহায়তায় মারধর ও ভাংচুরের সাথে জড়িত সন্দেহে ২৮ যাত্রীকে আটক করে বেতাগী থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
পরে রোববার বিকেলে পুলিশ ও নৌবাহিনীর যৌথ পাহারায় কঠোর নিরাপত্তায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদলতে সোপর্দ করা হয়। আটক হওয়া বাকি ১২ যাত্রীর মুচলেকা রেখে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া যাত্রীদের স্বজনদের দাবি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে লঞ্চের স্টাফ ও যাত্রীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া জনপ্রতি ৪০০ টাকার স্থলে ৮০০-১০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে লঞ্চের স্টাফ ও কর্মচারীদের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে ২০-২৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের আটক পারভেজের (২০) মা শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে পারভেজ ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়।’
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম কালবেলাকে বলেন, এম ভি রয়েল ক্রুজ-২ লঞ্চে মারামারি ও ভাঙচুরে মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির ঘটনায় জড়িত ১৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে লঞ্চের সুপারভাইজার এসএম খাইরুল হাসান শামীম বাদী মামলা দায়ের করেছে। রাজারহাট লঞ্চের মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির ঘটনায় ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের তিনজনের যে অপরাধ তা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পরে না, তাই তাদের প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বরগুনায় মব ভায়োলেন্স সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। যারা মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির করতে চাইবে বা করে বরগুনার মানুষদের অশান্তির মধ্যে ঠেলে দিবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
মন্তব্য করুন