চাঞ্চল্যকর ফিমা হত্যা মামলার আসামি কাজী সাগরসহ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা কাজী মনিরুল হক নামের স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের দায়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে এইচ পি আর নিউজ নামের একটি ভারতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমের বরাত দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে ২৭ মার্চ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কাজী মনির, মনিরের বড় ছেলে কাজী সাগর এবং সমুন্দী জাফর মিয়া। তবে গ্রেপ্তারের সময় কাজী সাগর নিজের পরিচয় গোপন করে আপন ছোট ভাই কাজী আকাশের নাম বলেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় পুলিশ ও গণমাধ্যমকে।
কাজী সাগর সম্প্রতি রাজধানীর আজিমপুরে ফিমা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বলে জানা গেছে।
কাজী সাগরের বাবা স্বর্ণ ব্যবসায়ী কাজী মনিরুল হক ২০২৪ সালের ৫ জুন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সারা দেশের উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে তিনিও অপসারিত হন।
মনিরুল উপজেলার বানা ইউনিয়ন যুবলীগের দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কাজী মনির উপজেলার গরানিয়ার মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে আরও জানা গেছে, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসের দায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬ মার্চ রাতে অভিযান চালিয়ে কাজী মনিরুল হক, কাজী সাগর ও জাফর মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় নদীয়া জেলার গাংনাপুর থানা পুলিশ। পরে ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) তাদের রানাঘাট আদালতে পাঠানো হয়। তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো রকম নথি ছাড়াই প্রবেশ করেছিলেন।
এদিকে গত ২০ মার্চ রাতে ঢাকার আজিমপুরের একটি বাসা থেকে কাজী মনিরুল হকের বড় ছেলে কাজী সাগরের স্ত্রী তাহিয়া তাসনিম ওরফে ফিমার (১৯) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে লালবাগের বিসি দাস স্ট্রিটের একটি ভবনের নবম তলার একটি বাসা থেকে গৃহবধূ তাহিয়া তাসামিমের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তখন নিহত গৃহবধূর স্বজনরা দাবি করে বলেছেন, ওই গৃহবধূর স্বামী কাজী সাগর তাকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
তারা বলেন, ফিমার গলায় স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন এবং শরীরে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন পেয়েছে, যা শ্বাসরোধ করে হত্যার ইঙ্গিত দেয়। প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার স্বামী কাজী সাগরই তাকে হত্যা করেছে। এই ঘটনার পরপরই কাজী মনিরুল হক তার ছেলে কাজী সাগর এবং সমুন্দি জাফর মিয়াকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাজী মনিরুল হকের পরিবার এবং তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে চাননি।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, কাজী সাগর ফিমা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি, পুলিশ তাকে খুঁজছে। তবে সে ভারতে পালিয়ে গিয়েছে, এটি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন