বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং বাঘ-হরিণের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের সুন্দরবন পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনে বেড়াতে যান। বিভিন্ন পর্যটন সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগের সহায়তায় সুন্দরবনের পর্যটন সেবা আরও উন্নত এবং নিরাপদ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বনবিভাগ। একইসঙ্গে সুন্দরবনের সব কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষা এবং ইকোট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান জানান, দেশের সমগ্র সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যের আধার। সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দিন রাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বন বিভাগ। বিগত দিনের তুলনায় সুন্দরবনে অনেকাংশে কমে গেছে অপরাধ কার্যক্রম। তারপরও ঈদ উপলক্ষে এক শ্রেণির অসাধু লোকজন সুযোগ বুঝে সুন্দরবনের সম্পদ লুণ্ঠন করার চেষ্টা চালায়। সেটি প্রতিহত করার জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, কাঠ পাচারকারী ও চোরা শিকারিরা অবৈধ পথে ঢুকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করার চেষ্টা করে থাকে। ঈদ উপলক্ষে মৌসুমি হরিণ শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এসব অপরাধী ও শিকারিদের দমনে ঈদকে সামনে রেখে সুন্দরবনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের সব কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও পর্যটন এলাকাগুলোতে ইকোট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়াবী হরিণ, কিং-কোবরা, বানর, গুইসাপসহ প্রায় ১০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভয়চরসহ ৩২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। সুন্দরী, পশুর, গেওয়া, গরান, কেওড়া, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এ বনে।
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদী ও খালে রয়েছে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, লবণ পানির প্রজাতির কুমির, রূপালী ইলিশ, চিংড়ি, রূপচাঁদা, কোরালসহ ৪০০ প্রজাতির মাছ এবং বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া। এসব সম্পদ সুরক্ষায় বনঅধিদপ্তর থেকে ঈদকে সামনে রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম ও নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে খুলনা রেঞ্জের উদ্যোগে রেঞ্জ কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন টিম দিন-রাত টহল কার্যক্রম চলমান রাখবে। এ ছাড়া বিশেষ স্মার্ট টিমের সদস্যরাও টহল কার্যক্রম চালাবেন বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন