পটুয়াখালী জেলা কারাগারে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে বন্দিদের জন্য ঈদ উপহার বিতরণের মাধ্যমে। ঈদের আনন্দ যেন কারাবন্দি জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, সেই লক্ষ্যেই এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেন পটুয়াখালী জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মাহবুবুল আলম।
এ উদ্যোগে কারাগারের ১৮০ জন পুরুষ বন্দির মাঝে ১৮০টি লুঙ্গি, ২৩ জন মহিলা বন্দির মাঝে ২৩টি শাড়ি এবং মায়ের সঙ্গে অবস্থানরত একটি শিশুকে পোশাক বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বন্দিদের মানসিক স্বস্তি এবং বিনোদনের জন্য একটি এলইডি টিভি সরবরাহ করা হয়।
বন্দিদের জীবন যাপন এবং তাদের মানসিক স্বস্তি প্রদান করতে এমন উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, ঈদের মতো উৎসবের দিনগুলোতে বন্দিরা তাদের পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় তাদের মানসিক অবস্থা সংকটপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় পটুয়াখালী জেলা কারাগারের এ উদ্যোগ তাদের মধ্যে নতুন করে আনন্দ এবং উৎসাহের সঞ্চার করেছে।
জেল সুপার মো. মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মহতী কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন, জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালী, যাদব সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), পটুয়াখালী, মো. মেহেদী হাসান, প্রবেশন অফিসার, পটুয়াখালী।
তারা সবাই বন্দিদের মাঝে উপহার বিতরণ করেন এবং বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজখবর নেন। তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বন্দিরা আনন্দিত হয়।
ঈদ উপহার পেয়ে বন্দিরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। তাদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক এবং মানসিক প্রশান্তি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। বন্দিদের এ উচ্ছ্বাসে কারাগারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও ভীষণ আনন্দিত।
বন্দিদের একজন বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি কারাগারের ভেতরে থেকেও ঈদ উদযাপন করতে পারব। এই উপহার আমাদের জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞতা।
এক শিশুর জন্য পোশাক এবং বন্দিদের জন্য টিভি বিতরণের বিষয়টি তাদের মনোবল ও বিনোদনের দিক থেকে এক বিশাল প্রভাব ফেলবে।
জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বন্দিদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে এই প্রয়াস তাদের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালাবে।
জেল সুপার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, বন্দিদের প্রতি আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা মানুষ, এবং আমরা চাই তাদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি হোক। এই উদ্যোগ তারই একটি অংশ। কারা মহাপরিদর্শক ও কারা উপমহাপরিদর্শক বরিশাল মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
সুশীল সমাজ মনে করে কারা কর্তৃপক্ষের এই মহতী উদ্যোগের মাধ্যমে কারাগারের মানবিক পরিবেশ আরও উজ্জ্বল হয়েছে। এটি বন্দিদের মাঝে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে এবং তাদের মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখবে। এ ছাড়া এ উদ্যোগটি অন্য কারাগারগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এমন উদ্যোগ শুধু বন্দিদের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না, বরং সমাজের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালনের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করে। পটুয়াখালী জেলা কারাগারের এই কার্যক্রম নিঃসন্দেহে দেশের কারাব্যবস্থার উন্নয়নে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন