শরীয়তপুরের ডামুড্যায় প্রকাশ্যে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন পুলিশের কনস্টেবল বলে জানা যায়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা দারুল আমান বাজার এলাকা মদন ব্যাপারীর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরণকারীদের আটক করা হয়।
উদ্ধার হওয়া দুই কাপড় ব্যবসায়ী হলেন- ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকর কান্দি এলাকার মৃত সোহরাব সরদারের ছেলে মোহাম্মদ জুয়েল সরদার (৩২) ও একই এলাকার মোহাম্মদ কাসেম সরদারের ছেলে ফয়সাল সরদার (২৪)। তারা ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী।
আটককৃতরা হলেন- বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার গারফা এলাকার বাচ্চু মিয়া শেখের ছেলে কৌশিক আহমেদ সেতু (৩০)। তিনি জেলা পুলিশ লাইনসে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার মৃত আব্দুর রহমান তালুকদারের ছেলে কাউসার তালুকদার (২৯)। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর (২৭)। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত এবং কুমিল্লার লাকসাম থানার আমৌদা এলাকার মৃত আনা মিয়ার ছেলে শরীফ হোসেন (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনার সময় ধূসর রঙের একটি মাইক্রোবাস ও একটি সুজুকি জিকসার কালো রঙের মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। এ সময় ৮ জন যুবকের মধ্যে চারজন নেমে জুয়েল ও ফয়সালকে জোর করে মাইক্রোবাসে ওঠায়। পরে অপহরণকারীরা ব্যবসয়ীদের নিয়ে রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে স্থানীয়দের তোপের মুখে পরে মাইক্রোবাসটি থামান। এতে দুই ব্যবসায়ী স্থানীয়দের সহযোগিতা চান ও ঘটনাগুলো খুলে বলেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে তিনজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে একজনকে শুক্রবার সকালে আটক করেছে পুলিশ।
অপহরণকারী রুবায়েত মীর বলেন, কাউসার তালুকদার হচ্ছে আমাদের বস। অপহরণের সময় যেই টাকা পেয়েছিলাম তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।
প্রত্যক্ষদর্শী ফাহিম আব্বাস বলেন, এলাকায় ডাকাত পড়েছে শুনে আমি বাড়ি থেকে বের হই। পরে শুনি ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আমি একজনকে জড়িয়ে ধরি। পরে এলাকাবাসী তাদের গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়। এ ছাড়া কয়েকজন পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে একজন আটক হয়েছে বলে শুনেছি।
ভুক্তভোগীদের চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান বলেন, আমার চাচাতো ভাই জুয়েল ও ফয়সাল অপহরণ হন। তাদের ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পরে অপহরণকারীরা ফয়সালকে দিয়ে তার আপন ভাই স্বাধীন সরদারকে মোবাইল ফোনে ফোন দেয়। পরে ২০ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। তখন ব্যাংক, বিকাশ ও নগদ থেকে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠায় তাদের। পরে আরও টাকা দাবি করলে তাদের লোভ দেখিয়ে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আনা হয়। বাসস্ট্যান্ড আসলে জুয়েল ও ফয়সালকে উদ্ধার করেন এবং স্থানীয় লোকজন তাদের তিনজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেন। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পরে একজনকে আটক করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ফয়সাল ও জুয়েল কালবেলাকে বলেন, আমরা কাপড় ব্যবসায়ী। দোকান থেকে রাতে কদরের নামাজ পড়ার জন্য বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন ব্যাপারীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের গতিরোধ করে মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে হাতে পুলিশের হাতকড়া পরিয়ে দেন এবং পিস্তল ঠেকিয়ে তারা বলেন, তোরাতো বড় ব্যবসায়ী তোদের টাকা কই। যদি বাঁচতে চাস আমাদের ২০ লাখ টাকা দিবি। আমরা পুলিশের লোক। পরে আমরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। তবু আমাদের লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয়, কিল-ঘুষি মারে। পরে আমাদের মাদারীপুর লেক পাড় নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে দিয়ে আমার ভাই স্বাধীনকে ফোন দেওয়ায়। আমি তখন টাকা পাঠাতে বলি। স্বাধীন ও আমরা ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেই তাদের। পরে বাকি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকার জন্য অপহরণকারীরা ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে আমরা মুক্তি পাই।
এ ব্যাপারে ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক কালবেলাকে বলেন, দুজন ব্যবসায়ী রাতে দোকান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের অপহরণ করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপহরণের ঘটনায় পুলিশ ও জনগণ চারজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছে, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মন্তব্য করুন