ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মিন্টু ইসলাম। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও দীর্ঘ তিন যুগ ধরে রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজন করায় তিনি পরিচিত। প্রতিদিন শতাধিক অসহায়-দুস্থ, রিকশাচালক, পথচারী ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তার দোকানের সামনে বসে ইফতার করেন। পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে ‘মিন্টু তুলা ঘর’ নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন, তার বাবা-মা প্রতিদিন অসহায় মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করতেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন মিন্টু ইসলাম নিজেও।
তিনি বলেন, রমজান মাস এলেই আমার বাবা-মা অসহায় মানুষদের জন্য ইফতার বানাতেন। তাদের অনুপস্থিতিতে আমি এই দায়িত্ব নিয়েছি। যতদিন বেঁচে আছি, এটা চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
প্রতিদিন সকাল থেকেই শুরু হয় রান্নার প্রস্তুতি। ইফতারের আগে আগে সেগুলো দোকানে এনে পরিবেশন করা হয়। একসময় দোকানের সামনের জায়গা ভরে যায় রোজাদারদের পদচারণায়। ইফতারের মেন্যুতে থাকে খিচুড়ি, তেহারি, বিরিয়ানি, শরবত, খেজুর, শসা ও নানা ধরনের ফল।
মিন্টু ইসলামের এই মহৎ উদ্যোগের কারণে অনেকেই ভালো খাবার খেয়ে ইফতার করতে পারেন। প্রতিদিন ইফতার করতে আসা কয়েকজন তাদের অনুভূতি জানিয়েছেন।
হাসান আলী রিকশাচালক ইফতার করতে এসে জানান, দিনশেষে একটা ভালো ইফতার করার সুযোগ সবসময় হয় না। এখানে এসে বিনামূল্যে ভালো খাবার খেতে পারি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
জয়নাল হোসেন, পথচারী বলেন, আমি ব্যবসার কাজে প্রতিদিন শহরে আসি। নামাজ পড়ে এই দোকানের সামনে এলে ইফতারের দাওয়াত পাই। মিন্টু ভাই দারুণ মানুষ, আল্লাহ উনাকে ভালো রাখুক।
সালমা বেগম নামে এক ভিক্ষুক বলেন, নিজের বাসায় এত ভালো ইফতার করতে পারি না। এখানে এসে খিচুড়ি-বিরিয়ানি খেতে পারি, খুব ভালো লাগে।
মিন্টু ইসলামের ছেলে হৃদয় রাব্বী বাবার এই উদ্যোগ নিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি, বাবা অসহায় মানুষদের জন্য ইফতার আয়োজন করেন। আমরা সবাই মিলে চাই, এই আয়োজন সারা জীবন চালিয়ে যেতে।
এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মিন্টু ইসলাম বলেন, আমি চাই, শুধু রমজান মাসেই নয়, সারা বছরই মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই ইফতার আয়োজন করতে চাই। রমজান শুধু সংযমের মাস নয়, দানেরও মাস।
মন্তব্য করুন