মহান স্বাধীনতা দিবসে লালমনিরহাট শহরের বিডিআর সড়কে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক মঞ্চের ম্যুরাল কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে দেয়।
এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক)।
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্মারকটি ঢাকা-বুড়িমারী সড়কের লালমনিরহাট শিশু পার্কসংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। মঞ্চের ম্যুরালে তৈরি ওই মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্মারকে পাথরের টাইলসের ওপরে খোদাই করা লেখায় ফুটিয়ে উঠেছে— বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার গঠন, স্বাধীন ভূখণ্ডে নব রবির উদয়, ’৭১-এর গণহত্যা, বিজয়ে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও জাতীয় পতাকা হাতে উল্লসিত জনতা।
বুধবার ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে দেওয়ার ঘটনায় সংস্কৃতিকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, সুশীল সমাজ ও সচেতন নাগরিক সমাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে কাপড় সরিয়ে দেওয়া হয়।
পরে টিআইবির এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের পাঠানো হয়। এতে জানানো হয়, ২৬ মার্চ সকালে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্মারকের পাশে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করতে এসে বিষয়টি সনাকের নজরে আসে। স্মৃতি স্মারকটি অজ্ঞাত কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় সনাক।
সনাক লালমনিরহাট সহসভাপতি রাওয়ানা মার্জিয়া জানান, মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত আমাদের লালমনিরহাট। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও অবদানে আমরা এ দেশ পেয়েছি, তাদের ইতিহাস ও স্মৃতি চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তাদের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের এ রূপ কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
টিআইবির এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোরশেদ আলম জানান, একজন ব্যক্তি— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের সারসংক্ষেপ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতি স্মারক ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় সনাক লালমনিরহাটের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। আর প্রতিবাদস্বরূপ সনাকের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারকের পাশে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি না দিয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার কালবেলাকে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন