ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের শিবপুর ও বলুহা গ্রামের সংযোগস্থলে চৌকা বিলের ওপর কোটি ব্যয়ে নির্মিত পাকা সেতুটি জনসাধারণের কোনো কাজে আসছে না।
সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় দুই পাড়ের বাসিন্দাদের সেতুর একপাশে মাটির স্তূপ বেয়ে সেতুর ওপর উঠতে হয়। আরেক পাশে সেতুর ওপর থেকে নামতে হয় লাফ দিয়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও নির্মাণ কাজের কচ্ছপ গতির কারণে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু পার হতে গিয়ে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাসহ আহত হওয়ার ঘটনা। কোটি টাকার সেতুটি এখন গ্রামবাসীর বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের চৌকা বিলের ওপর নির্মিত পাকা সেতু ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় গ্রামবাসীর চলাচল সুবিধায় রামগোপালপুর ইউনিয়নের পরিষদের উদ্যোগে বাঁশ ও লোহার পাত দিয়ে সেতুর সংযোগস্থলে সাঁকো করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিবপুর ও বলুহা গ্রামের সংযোগস্থলে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ৪১৬ টাকা ৩০ পয়সা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ২৬ জুন সেতুর কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণের সময় নির্ধারণ করা হয় ছয় মাস। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও নির্মাণকাজে কচ্ছপ গতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়।
গ্রামবাসী জানান, ছয় মাস আগে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন।
কয়েক মাস আগে স্থানীয়রা সেতুর দুপাশে মাটি ভরাট করে সেতুর দুপাশ চলাচল উপযোগী করে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই মাটি সরে যাওয়ায় শিবপুর ও বলুহাসহ কয়েক গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও শিক্ষার্থীদের সেতু পার হতে গিয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ লাঘব করতে আসছে বর্ষার আগেই যেন সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক করা হয় এই দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিবপুরের বাসিন্দা আলিম উদ্দিন বলেন, সেতু নির্মাণের পর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছিল। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক না হওয়ায় সেতুটি এখন গ্রামবাসীর বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক না থাকায় ওই পাড়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না, কৃষিপণ্য পারাপার করতে দুর্ভোগ হয়। কেউ অসুস্থ হলেও সেতু পারাপার করতে গিয়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাল উদ্দিন বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর সেতুটি পরিদর্শন করেছি। নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তিনি ২০২৫ সালে ২৬ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে তাগিদ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাজ্জাদুল হাসান কালবেলাকে জানান, সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরও যদি কাজ সম্পন্ন না করে তাহলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সেতুটি যেহেতু মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত। তাই সেতুটির নামকরণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কোনো নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন