পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা (যাপ) ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে। যাত্রী পরিবহনে বরিশাল-ঢাকা রুটে সরাসরি চলাচল করবে ২৬টি লঞ্চ। গত ২৫ মার্চ দিয়ে শুরু হয় এ রুটের ঈদের বিশেষ সার্ভিস। ২৬টি লঞ্চ তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঈদে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে।
এছাড়া ভায়া রুটের কয়েকটি লঞ্চ বরিশাল নৌ বন্দরে যাত্রী নামিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু কাউন্টারগুলোতে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের টিকিট নেওয়ার তোড়জোড় নেই। অথচ বছর তিনেক আগেও একই সময়ে লঞ্চের টিকিটের জন্য কাউন্টারে কাউন্টারে ছুটতেন যাত্রীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ঈদের বিশেষ সার্ভিসে চলাচলের জন্য এ রুটের ২৬টি লঞ্চ নিয়ে ৩টি গ্রুপ করা হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী অ্যাডভেঞ্চার-৯, পারাবাত-৯ ও ১৮, সুন্দরবন -১৫, কীর্তনখোলা ও মানামী, শুভরাজ-৯, পারাবাত ১১, সুরভীর-৯, সুন্দরবন ১০, কুয়াকাটা ২, অ্যাডভেঞ্চার ১, প্রিন্স আওলাদ ১০, সুন্দরবন ১৬, পারাবত ১২, সুরভীর ৭, পারাবাত ১০, কীর্তনখোলা ১০ ও মানামী লঞ্চ চলবে। এ বছর ডেকের যাত্রী ভাড়া ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিন ২ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ, ঈদের আগে ও পরে নদীতে বাল্কহেডসহ ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা, নদীতে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর টহল নিশ্চিত করা, মেরিন ক্যাডেট, স্কাউট, গার্লস গাইডের সদস্যরা যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা-নামসহ সার্বিক সহযোগিতা করবেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, থানা, নৌ-পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা নৌ-বন্দর এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী বয়া আছে কি না তা নিশ্চিত করা হবে।
কয়েকজন লঞ্চমালিক জানান, এবার ঈদে লম্বা ছুটি পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও লম্বা ছুটির সম্ভাবনা আছে। এবার বেশিসংখ্যক যাত্রীর গ্রামে ফেরার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য শুরুতে চাহিদা কম থাকলেও শেষ মুহূর্তে চাহিদা বাড়তে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।
অ্যাডভেঞ্চার ১ লঞ্চের কেরানি মো. হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখন আর লঞ্চে তেমন যাত্রী নেই। তাই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে মোটামুটি সাড়া মিলছে। এখনো অনেক কেবিন খালি রয়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্যসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানিয়েছেন, তারা ঈদ উপলক্ষে রোটেশন বা পালা প্রথা তুলে দিয়ে লঞ্চের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন।
মেসার্স সুরভি শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, গত মঙ্গলবার ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালে বিশেষ সার্ভিস শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৫-৬টি লঞ্চ এ সার্ভিসে যুক্ত হবে। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
নগরের ফজুলল হক অ্যাভিনিউয়ে এমভি সুন্দরবন লঞ্চের কাউন্টারে গিয়ে কয়েকজন যাত্রীকে টিকিট নিতে দেখা গেল। রাজিব হোসেন নামের একজন জানান, তার ভাই ও ভাইয়ের পরিবার ঈদে বাড়িতে আসবেন। এ জন্য টিকিট নিতে এসেছেন। টিকিট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। আর আগের মতো চাপ নেই।
এ নিয়ে কথা হলে সুন্দরবন লঞ্চ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম পিন্টু জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর নৌপথে অন্তত ৬০ শতাংশ যাত্রী কমে যায়। লোকসান এড়াতে তাঁরা লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে আনেন। আগে যেখানে দিনে ছয়টি লঞ্চ চলত, এখন সেখানে পালা করে দুটি চলছে। এবার ঈদ উপলক্ষে দুই প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ বাড়ানো হবে। লম্বা ছুটির কারণে ঈদের দু-তিন দিন আগে লঞ্চের টিকিটের চাপ বাড়তে পারে।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ঘরমুখী মানুষের চাপের ওপর নির্ভর করবে এই রুটে বিশেষ সার্ভিসে কতগুলো লঞ্চ চলাচল করবে। তবে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে ঈদ উপলক্ষে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল ২৬টি লঞ্চ চলাচল করবে। এসব লঞ্চে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বাঁধা থাকবে না। লঞ্চে যাত্রী বোঝাই হলেই ঘাট ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের অন্যান্য রুট মিলিয়ে এক ও দুই তলা বিশিষ্ট মোট ৬০টিরও অধিক লঞ্চ ও সরকারি স্টিমার চলাচল করবে।
মন্তব্য করুন