চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দাদের বন্যহাতির আক্রমণ থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে কর্ণফুলী-আনোয়ারা পিএবি সড়কটির কর্ণফুলীর দৌলতপুর স্কুল এলাকা এবং আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল সড়কের জাইল্লাঘাটা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা।
অবরোধের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পেকুয়া উপজেলা ও কর্ণফুলী টানেলের হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়ে ঈদে ঘর মুখো মানুষ। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে অবরোধকারীদের সরানোর চেষ্টা করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে বেলা ১১ টার পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সড়ক অবরোধের কারণে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।
সড়ক অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন চাকরিজীবীরা। আটকা পড়েছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের গাড়ি। এদিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি হাতির বিষয়টি নিরসনের জন্য প্রশাসন চার দিনের সময় নিয়েও তারা কোনো সুরাহা করেনি। এ কারণে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। হাতির বিষয়টি স্থায়ী কোনও সমাধান না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আন্দোলনকারী স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, দেয়াং পাহাড়ে অবস্থানরত হাতিগুলোর আক্রমণে বিগত ১০ বছরে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার অন্তত ১৯ জন নারী-শিশু ও বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটেছে। গত ২২ মার্চ হাতি নিরসনের দাবিতে আমরা সড়ক অবরোধ করলে প্রশাসন ৪দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করার আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো সুরাহা দিতে না পারায় আমরা আন্দোলনে নেমেছি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের কথা চিন্তা করে ও সেনাবাহিনীর আশ্বস্তের কারণে আমরা আজ অবরোধ প্রত্যাহার করলেও স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
জানা যায়, গত ২২ মার্চ রাত ১ টার দিকে দেয়াং পাহাড়ে অবস্থানরত তিনটি হাতি শাহমীরপুর জমাদার পাড়া এলাকায় মোহাম্মদ ইব্রাহীমের বাড়িতে প্রবেশ করে। ইব্রাহিমের স্ত্রী খতিজা বেগম ঘরের ভেতর শিশু আরমান জাওয়াদ কোলে নিয়ে অবস্থান করে। এসময় একটি হাতি ভেতরে ঢুকে পড়লে শিশুকে নিয়ে তার মা দৌড় দিলে হাতির শুঁড়ের আঘাতে মায়ের কোল থেকে শিশুটি পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। পরে স্বজনরা খাদিজা বেগমকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তার অবস্থা এখনো আশংকাজনক বলে জানা যায়। বিগত ১০ বছরে দুই উপজেলার নারী শিশুসহ ১৯ জন মানুষ মারা গেছে। হাতি গুলো এখান থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয়রা কেইপিজেড, প্রশাসন ও বন বিভাগের লোকজনকে একাধিকবার স্মারকলিপি দিলেও কোন সুরাহা না হওয়ায় তারা আন্দোলনে নামে।
বাঁশখালী জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, আমাদের বনবিভাগের ৫০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইআরটি সদস্য কাজ করছে। কেইপিজেডের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য গত অক্টোবর থেকে ১৫জন ইআরটি সদস্য কাজ করছিল। গত ৮ মার্চ থেকে ইআরটি সদস্যদের বাদ দিয়েছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারি থেকে তাদের বেতন দিচ্ছে না। তাদের বেতন পরিশোধ করতে একটি চিঠিও বাঁশখালী জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তার অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কেপিজেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমান বলেন, কেইপিজেড একটি বৃহত্তম শিল্প অঞ্চল। এখানে আগে কখনো হাতি ছিল না। এখন যে হাতি আসছে সে গুলো সরাতে আমরাও চাই। বনবিভাগকে একাধিকবার চিঠি দিলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। আর স্থানীয় লোকজন কি কারণে কেপিজেডকে প্রতিপক্ষ ভাবেন আমরা বুঝি না। হাতি সরানোর জন্য কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব। তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জামাল উদ্দিন চৌধুরি জানান, সড়কে জনগণের ভোগান্তি যেন না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাতি নিরসনের বিষয়টি সম্পন্ন উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের।
মন্তব্য করুন