শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সামনে এক শিক্ষিকাকে বেধড়ক পেটালেন যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান। শুধু শ্রেণিকক্ষে নয়, শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে বিদ্যালয় চত্বরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে মারধর করে আহত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে যশোরের মনিরামপুর পৌর এলাকার দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে অভিযোগসহ স্থানীয় থানায় মামলা করেছেন শিক্ষিকা ছালিমা আক্তার। তবে ঘটনায় জড়িত মিজান পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অভিযুক্ত মিজান বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রাকিবুল ইসলামের পিতা এবং পৌর এলাকার দূর্গাপুর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
মারধরের শিকার শিক্ষিকা ছালিমা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিল। একটি কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলাম আমি। এ সময় দূর্গাপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রাকিবুল ইসলাম শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত বেসিনের ট্যাপ খোলার চেষ্টা করছিল। দেখতে পেয়ে তিনি নিষেধ করায় ওই শিক্ষার্থী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীকে শাসন করেন তিনি।
ছালিমা আক্তার আরও বলেন, শাসনের ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গিয়ে নালিশ করে। মুহূর্তের মধ্যে ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাসহ অন্যান্যরা স্কুলে আসে। এ সময় আমাকে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সামনে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে মিজান। একপর্যায়ে চুলের মুঠি ধরে পেটাতে পেটাতে টেনেহিঁচড়ে বিদ্যালয়ের মাঠ চত্বরে নিয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে ওই বিদ্যালয় সংলগ্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মিজানকে নিভৃত করেন। খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসমত আরা পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারবৃন্দ বিদ্যালয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে মিজানুর রহমান মিজান মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষিকাকে মারধর করা হয়নি। তার সাথে মুখ কালাকালি হয়েছে’।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসমত আরা পারভীন বলেন, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি জালাল উদ্দীন বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আহম্মেদ শফি বলেন, ঘটনাটি নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। তারা আজ সন্ধ্যায় জরুরি সভার আয়োজন করছেন। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে যাবেন। ন্যায়বিচার না পেলে পরবর্তীতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিবে শিক্ষক সমিতি।
মনিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামি আটকের জোর চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় উপজেলা শিক্ষক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন