পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বাসায় ডেকে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হারুন অর রশিদ নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে দেবীগঞ্জ থানায় বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার ওরফে ইঞ্জিন।
অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চিলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
এই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন আব্দুস সাত্তার, তার স্ত্রী ফরিদা বেগম, ছেলে খোকন বাবু ও তার চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেহেনা খাতুন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তারের বড় ছেলে মোস্তাকিম ইসলাম ও চিলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের মেয়ে সিফাতে সাদিয়া সুহার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারের অগোচরে ২০২১ সালে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়ের পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। প্রায় ২০ দিন আগে মোস্তাকিম ও সুহা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে রাখা হয়।
কিন্তু গত ২৪ মার্চ সুহা আবারও স্বামীর সঙ্গে চলে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের নির্দেশে তার লোকজন রাত ৯টার দিকে মোস্তাকিমের বাবা-মায়ের কাছে ছেলের অবস্থান জানতে চান। তারা কিছু জানেন না বললে, চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের জোরপূর্বক চেয়ারম্যানের ভাই নূর হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়।
নির্যাতনের শিকার মোস্তাকিমের মায়ের দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয় এবং গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা ভাবির পেটে লাথি মারা হয় এতে করে তার পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় এবং ছোট ভাই খোকনকে কর্মস্থল থেকে ডেকে এনে বস্তাবন্দি করে মারধর করা হয়। পরবর্তীতে মোস্তাকিমের ছোট ভাই খোকনের শ্বশুর ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম বলেন, আমার ছেলে নাকি হারুন চেয়ারম্যানের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। হারুন চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের কাছে জানতে চায় সে কোথায় আছে। আমরা যখন বলি আমরা জানি না, তখন আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চেয়ারম্যানের ভাইয়ের বাসায় তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে। আমার দুটো হাত ভেঙে দিয়েছে, আমার অন্তঃসত্ত্বা বৌমার পেটে লাথি দিয়েছে। পেটের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ বলেন, গতকাল ইফতার মাহফিল ও উঠান বৈঠকের জন্য অন্য এলাকায় ছিলাম। পরে এই ঘটনা শুনি। মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
এদিকে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার ইঞ্জিন বলেন, গতকাল বিকেলে মামলা করার জন্য এজাহার জমা দিয়েছি। জাতীয় পরিচয় পত্রসহ সব কাগজ জমা দিয়েছি। এখনো মামলা হয়নি। এখন থানা থেকে বলছে আজকে নাকি সন্ধ্যায় মামলা রেকর্ড হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসছে আমার বৌমার পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় তারা একটি ত্রুটিপূর্ণ এজাহার জমা দিয়েছে। মামলা করতে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে, তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে তারা বলে আপাতত মামলা আর করবে না। তারা বলে মামলার বিষয়ে ভেবে চিন্তে জানাবে।
মন্তব্য করুন