বেতন-বোনাসের দাবিতে চট্টগ্রামে আবারও সড়ক অবরোধ করেছেন জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সড়কের দুই পাশেই তাদের এমন আন্দোলনের ফলে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এতে দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, কারখানার মালিকপক্ষ বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেছে। আজ মঙ্গলবার বেতন-ভাতা দেওয়া হতে পারে।
সোমবার (২৪ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে নগরের ইপিজেড থানার ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট সড়কের ফ্রিপোর্ট মোড়ে ওই কারখানার পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অবস্থান নেন। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা সড়কেই অবস্থান করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেএমএস গ্রুপের মালিকানাধীন জেএমএস গার্মেন্টস গত ৪ মার্চ কাজ না থাকায় এবং ব্যাংকিং জটিলতার কারণে লে-অফ (সাময়িক বন্ধ) ঘোষণা করা হয়। লে-অফ চলাকালীন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা ১৫ অনুযায়ী, গত ২০ মার্চ ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এবং ২৩ মার্চ ঈদ বোনাস পরিশোধের কথা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কোনো শ্রমিক নির্দিষ্ট তারিখে বেতন পাননি।
নোটিশের মাধ্যমে ২৫ মার্চ বেতন পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হলেও শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত না মেনে গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে কারখানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে ছয় শতাধিক শ্রমিক সকাল ১০টার দিকে নগরের ব্যস্ততম সড়ক ফ্রিপোর্ট মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বন্দর-পতেঙ্গাগামী সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মার্চ মালিকপক্ষের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসবে— বেপজার এমন আশ্বাসে সড়ক ছেড়েছিলেন তারা।
এদিকে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বেপজার আশ্বাস অনুযায়ী কারখানার সামনে ভিড় করেন শ্রমিকরা। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান কারখানায় তালা ঝোলানো। এরপরই তারা ফ্রিপোর্ট মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের উভয় পাশে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন পোশাকশ্রমিকরা। ফলে বন্দর-পতেঙ্গাগামী সব গাড়ি আটকা পড়ে এবং ওই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে থানা-পুলিশ, শিল্প পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বেতন-বোনাস না পাওয়ায় শ্রমিকরা সড়ক ছাড়েননি।
জেএমএস কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘বাসা থেকে বের হলে বাড়িওয়ালা জিজ্ঞেস করে কই যান। যেন আমরা চোর। বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না বেতন না পাওয়ায়। সামনে একটা ঈদ, কিন্তু পরিবারের কারও জন্য কিছু কিনতে পারিনি। মালিকপক্ষ বারবার বেতন দেবে বলেও দিচ্ছে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি।’
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সুলাইমান কালবেলাকে বলেন, কারখানার মালিক ঢাকায় ছিলেন। চট্টগ্রাম এসে তিনি ব্যাংকে লোনের আবেদন করে ঢাকায় ফিরে গেছেন। আমরা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। মঙ্গলবার বেতন পরিশোধ করা হবে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা শ্রমিকদের বোঝাচ্ছি। তারা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। দেখি বুঝিয়ে তাদের ঘরে ফেরানো যায় কি না।
মন্তব্য করুন