কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় পারুল বেগম (৫২) নামের এক রোগীর মৃত্যুর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন পাঁচ সাংবাদিক।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ আহতদের।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দফায় দফায় গন্ডগোল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওই রোগীর বাড়ি নগরীর ধর্মপুরে। তার ছেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী।
আহত হয়েছেন যমুনা টিভির কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম চৌধুরী খোকন, ক্যামেরাপারসন জিহাদুর ইসলাম সাকিব, চ্যানেল ২৪-এর নিজস্ব প্রতিবেদক জাহিদুর রহমান, ক্যামেরাপারসন ইরফান ও নয়াদিগন্তের ডিজিটাল রিপোর্টার ফাহিম। তাদের মধ্যে রফিক চৌধুরী ও সাকিব কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা একই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (২২ মার্চ) সকালে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে শতাধিক গণমাধ্যম কর্মী। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও এতে অংশ নেন।
মানববন্ধনে সাংবাদিকরা হাসপাতালের পরিচালকের অপসারণ ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে জড়িতদের বিচার দাবি জানান।
মারধরে আহত খোকন চৌধুরী জানান, ভুল ইনজেকশনে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন খবর পেয়ে আমরা কুমেকে আসি। তখন সেনাসদস্যরাও আসেন। পুলিশ আগে থেকেই ছিল। মৃত রোগীর ওয়ার্ড নতুন ভবনের সাত তলায় যেতে আমি ও আমার ক্যামেরাপারসন সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম। তৃতীয় তলার সিঁড়িতে মৃত রোগীর স্বামীকে পেয়ে মোবাইলে তার বক্তব্য রেকর্ড করার সময় উত্তেজিত ইন্টার্ন চিকিৎসক, কুমেকের একদল শিক্ষার্থী ও কর্মচারী আমার ওপর চড়াও হয়ে দুটি মোবাইল, মোবাইল স্ট্যান্ড ও মাইক্রোফোন নিয়ে নেয়। সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ক্যামেরাপারসনের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তাকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়। একই সময় মারধর চলে চ্যানেল ২৪-এর কুমিল্লা প্রতিনিধি ও তার ক্যামেরাপারসনের ওপর।
তিনি বলেন, তাদের অনেকেই আমার পূর্বপরিচিত। আমিসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করছি। সেসব সংবাদ প্রকাশও হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ওপর হামলা করা হয়ে থাকতে পারে। এর আগেও বেশ কয়েকবার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি আমরা। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ইন্টার্ন চিকিৎসক সফিউল্লাহ বলেন, মৃত রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছিল। তখন সাংবাদিকরাও আসে। তখনই ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসকও হামলার শিকার হয়েছেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেছেন। তাদের সদর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন