রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে আমের এবার ‘অনইয়ার’। আমবাগানগুলোতে গাছভরে এসেছিল মুকুল। বর্তমানে মুকুল থেকে বের হয়েছে আমের গুটি। মুকুল আসার পর থেকেই অনুকূলে রয়েছে আবহাওয়া। গত দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আমের গুটির বোঁটাকে শক্ত করেছে। আর এই বৃষ্টিই ঠিক সময়ে রাজশাহী অঞ্চলের আমের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে।
বৃষ্টি আর মেঘলা আবহাওয়া নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের কোনো কোনো চাষি দুশ্চিন্তা করলেও কৃষি বিভাগ বলছে, এই বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ। এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। বরং, বৃষ্টির কারণে আমের গুটি দ্রুত বড় হবে। গুটির ঝরে পড়া থামবে। পাশাপাশি পোড়া মুকুল ঝরে যাওয়ায় আমের গায়ে দাগ কম হবে। গাছে গাছে ধরবে ফ্রেশ আম। বাজারে ফ্রেশ আমের দাম থাকে ভালো। আবহাওয়া এ পর্যন্ত আমের অনুকূলে আছে বলেও জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবারও রাজশাহীতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। সে হিসেবে এটি মৃদু তাপপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড কমে যায় ২৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আর শনিবার (২২ মার্চ) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর রাজশাহীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ২ মিলিমিটার। রাজশাহী ছাড়াও আম উৎপাদনকারী অন্য তিন জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ এবং নাটোরেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতে চাষিদের কেউ খুশি, কেউ আবার দুশ্চিন্তা করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির পর শনিবার বাগানে এসেছি। এসেই মনটা ভরে গেছে। একদিনের টিপ টিপ বৃষ্টিতেই মনে হচ্ছে গুটি অনেকখানি বড় হয়ে গেছে। এই গুটিরও এখন ঝরে পড়া কমবে। বৃষ্টির কারণে মুকুল ডাটার বেশিরভাগ পোড়া মুকুলও ঝরে গেছে। মটরদানা কিংবা মার্বেলের আকারের গুটিগুলো এখন ঝকঝক করছে। গুটির পাশে পোড়া মুকুল থাকলে আমের গায়ে দাগ হয়। আমটা ফ্রেশ হয় না। কিন্তু পোড়া মুকুল সরানোও যায় না। বৃষ্টি-বাতাসে প্রাকৃতিকভাবেই ঝরে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালোই আছে। বৃষ্টির পর গাছ এবং আমের গুটি ঝকঝকে-তককে হয়ে গেছে। গুটিগুলোতে নতুন করে প্রাণ এসেছে। এখন ভয়ের বিষয় একটাই- শিলাবৃষ্টি। এটা না হলেই হয়। এটা না হলে যেমন গুটি এসেছে তাতে ভালো ফলন হবে।’
তবে বৃষ্টি নিয়ে কিছুটা শঙ্কার মধ্যে আছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আমচাষি দিলদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে গেছে। আকাশও মেঘলা। হালকা বৃষ্টির কারণে গুটিতে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। ঝুম বৃষ্টি হলে এটা হতো না। এ জন্য রোদ উঠলেই আমি গাছে একটা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে গুটিটা ধুয়ে নিব।’
বৃষ্টির পর একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এই বৃষ্টি আমের জন্য ভালো হয়েছে। এখন আমের বোঁটায় পানি পড়েছে বলে বোঁটা শক্ত হবে। গুটির পাশে যে পরিত্যক্ত পোড়া মুকুল থাকে, সেগুলোও ঝরে পড়বে। আমের ডাঁটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্রুত আম বড় হবে। তবে বৃষ্টির পর একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করে নিতে হবে। তাহলে ভালো হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর আমের ফলন ছিল কম। তাই এবার বেশি ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চলতি মৌসুমে নওগাঁর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন এবং রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে ২ লাখ ৬০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান কালবেলাকে জানান, বাগানের অর্ধেকেরও বেশি আমের মুকুল এখন গুটিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৬৫ শতাংশ মুকুল বর্তমানে মটরশুঁটির আকারে পৌঁছেছে, আর ৩৫ শতাংশ গুটি মার্বেলের আকার পেয়েছে। বৃষ্টির পর এখন গুটির বৃদ্ধি দ্রুত হবে বলেও তিনি মনে করছেন।
মন্তব্য করুন