স্নাতক পাসের অফিসার নিয়োগ দিতে মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছেন এসএসসি পাস একজন। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। এমন ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারে সিডা নামক প্রতিষ্ঠানে।
জানা গেছে, নিয়োগের আবেদন করতে জনপ্রতি প্রার্থীকে জামানত দিতে হয়েছে ১ হাজার ৮২০ টাকা। সে হিসাবে একদিনে তিন উপজেলায় ৩০৯টি আবেদনে জমা পড়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০ টাকা। এসব টাকার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নেওয়া হয়েছে প্রার্থী প্রতি ৩২০ টাকা। আর ক্যাশ নেওয়া হয়েছে ১৫০০ টাকা করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধহাটা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মো. সালাউদ্দিনের বাড়ির দোতলায় সিডা এনজিও অফিস। সেখানে নিয়োগের নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন শেখ মিঠুন আলী নামের এক ব্যক্তি। জানা যায়, তিনি আশাশুনি উপজেলার দরগাপুর ইউনিয়নের শেখ সিদ্দিক আলীর ছেলে।
সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি সিডা নামের এই সংগঠনের অনুমোদন নেন শেখ মিঠুন।
এলাকাবাসী ও অফিসে নিয়োগ পেতে আসা কর্মীদের মাধ্যমে জানা যায়, গ্রাম মহল্লায় একসঙ্গে ওয়াশরুম করে দেওয়ার জন্য ২৩ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে সিডা অফিসে। এই টাকা জমা দিলে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে জমাকারীদের বাড়িতে ওয়াশরুম বানিয়ে দেওয়া হবে। এই প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষের কাছ হতে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মিঠুন আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করত ও অষ্টম শ্রেণি পাস। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক ডিগ্রি পাসের নিয়োগ দিয়েছে এবং ওই অফিসে আজ তাদের ভাইবা ও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে স্থানীয় জনগণ সাংবাদিকসহ ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফিরোজ আহমেদ থানা এবং সেনা ক্যাম্পে বিষয়টি জানান। পরে সেনা ক্যাম্প কমান্ডার লে. রাদীদ রায়হানের নেতৃত্বে থানা পুলিশসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিডা কোম্পানির পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি সঠিক কোনো উত্তর দিতে না পারায় সিডার অফিসে তালা লাগিয়ে দেন তারা। এ সময় পরিচালকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে অফিসের সঠিক কাগজপত্র আগামী ২৩ মার্চে সেনা ক্যাম্প এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
সেনা ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাদীদ রায়হান বলেন, সঠিক কাগজপত্র দেখার পর পরবর্তী কার্যক্রম করতে পারবে। যদি সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে দরগাপুর আঞ্চলিক প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রভাষক শেখ আশিকুর রহমান আশিক বলেন, সিডা এনজিওর পরিচালক এর আগে তার নিজের গ্রামে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে গেছে। সে একটা সিন্ডিকেট পরিচালনা করে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, সেনা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের রোববার সকল কাগজপত্র দেখাতে বলেছেন। কাগজপত্র দেখে সঠিক পেলে ভালো, না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন