জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় সরকারি জলাশয় দখল করা নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুপক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জুর অনুসারীর মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
আহতরা হলেন- আব্দুল ওয়াদুদ, আব্দুল মামুন, তামান্না রাণী, কাজের বুয়া হাসনা বেগম, ইফতার বিক্রেতা সইঞ্চা, স্বর্ণকার মতিউর রহমান, মোবাইল দোকানদার রতন মিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহাদান ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এই দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর সরকারি জলাশয় ‘তালতলা দহ’ দখল নিয়ে বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। তালতলা দহ ১৪২৮ থেকে ১৪৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের নেতা খলিলুর রহমান এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জুর নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন লিটন ও সাবেক ইউপি সদস্য ইসাহাক আলী জলাশয়টি নিয়ন্ত্রণে নেন।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলা বিএনপির জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আওয়ালের পক্ষের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব জলাশয়টি পুনর্দখলের চেষ্টা করেন।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আব্দুল ওয়াহাবের অনুসারীরা জলাশয়ে গিয়ে পাঁচটি মাছ ধরার নৌকা ভাঙচুর ও দুটি জালে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াদুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
শুক্রবার সকালে সানাকৈর বাজারে বিএনপির দলীয় কার্যালয়, আব্দুল আওয়ালের বাড়ি ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিকেলে সানাকৈর বাজারে সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল আওয়াল বলেন, রিফিউজি আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু ও বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল ওয়াদুদ গং এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের সহযোগিতায় তারা বিএনপির কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার-উস-সাদাত লাঞ্জু অভিযোগ করেন, আব্দুল আওয়াল জনপ্রিয়তা হারিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তালতলা দহ দখল নিতে তিনি আমাদের আটটি বাড়ি, ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন।
সম্মেলনে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব বলেন, আব্দুল ওয়াদুদ একজন মাদক চোরাকারবারি। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে দলীয় প্রধানের ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল কবির শামীমের নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও প্রতিবারই বন্ধ পাওয়া যায়।
যোগাযোগ করা হলে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, সংঘর্ষের কারণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন