ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। বাড়ানো হচ্ছে ফেরির সংখ্যা। সব ঠিক থাকলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে এবার ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির, প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, ঈদে অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এবার এই নৌরুটে চলাচল করবে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি ও ২২টি লঞ্চ। এ ছাড়া গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া প্রান্তে লঞ্চঘাটের পাশাপাশি ফেরি লোড-আনলোডে সাত ঘাটের মধ্যে চালু থাকবে তিনটির আট পকেট। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকাসহ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, মলমপার্টি, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকস্তরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মৌসুমি টিকিট কাউন্টার থাকবে। নজরদারি চলবে অবৈধ যানবাহনে। ঘাট এলাকার সড়কে করা হবে আলোকসজ্জা। যাত্রীরা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ভোগান্তি থাকলেও এখন দৌলতদিয়ায় কোনো ঝামেলা নেই।
তবে ছিনতাই, মলমপার্টিসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। যানবাহনের চালকরা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এখন আগের মতো ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না।
তবে ঈদের সময় যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে সব ফেরি ঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে সমস্যা হবে না। কিন্তু তিনটি ঘাট চাপ সামলাতে পারবে না। কারণ ফেরি একটি আনলোড হয়, আরেকটি অপেক্ষা করে। এ অবস্থায় ঘাট ফাঁকা না থাকলে সময়মতো যাত্রীদের আনা-নেওয়া করা যাবে না। এতে ভোগান্তি বাড়বে। এ জন্য ঘাটও বাড়ানো দরকার।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ম্যানেজার আবুল হাশেম বলেন, ঈদে যাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে পারাপারে এই রুটে ২২টি লঞ্চ চলাচল করবে। আর প্রতিটি লঞ্চের ফিটনেস ঠিক আছে। প্রশাসনসহ বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা ঘাট এলাকায় থাকবেন।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ঈদের আগে ও পরে মানুষের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে প্রায় সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা খুব কম। যানবাহনের চাপ অনুযায়ী ১০ থেকে ১২টি ফেরি চলছে। তবে ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে ১৭টি ফেরি চলবে এবং ফেরি ঘাট চালু থাকবে তিনটি। আশা করছি এর মাধ্যমে যাত্রীরা নিরাপদে পারাপার হতে পারবে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরীফ আল রাজীব কালবেলাকে বলেন, ঈদে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করেন। সে দিক বিবেচনায় ঈদের আগে-পরে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন এবং হয়রানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মলম পার্টি রোধে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। আশা করছি, যাত্রীদের সহযোগিতায় এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। তবে এখন আগের মতো যানবাহনের লম্বা সারি ও যাত্রী-হকারদের হাঁকডাক নেই। পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদে ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া দিয়ে ৫-৭ হাজার যানবাহন নদী পারাপার হলেও সে সংখ্যা এখন নেমেছে অর্ধেকে। বর্তমানে দৌলতদিয়ার সাত ফেরি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে তিনটি। পাশাপাশি সচল লঞ্চ ঘাট।
বর্তমানে এই রুট দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার ছোট-বড় যানবাহন নদী পারাপার হলেও ঈদে চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের কর্তৃপক্ষরা।
মন্তব্য করুন