মিঠু দাস জয়, সিলেট
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫, ১০:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে ঈদবাজার, চড়া দাম ফুটপাত বিপণিবিতানে

সিলেটে জমে উঠেছে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা। ছবি : কালবেলা
সিলেটে জমে উঠেছে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা। ছবি : কালবেলা

পবিত্র রমজানের শেষ ১০ দিন অতিবাহিত করছেন মুসলমানরা। সামনে মুসলিম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে সারা দেশের মতো সিলেটেও জমে উঠেছে ঈদবাজার। সকাল-সন্ধ্যা এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় শপিংমলগুলোতে নামে মানুষের ঢল। যানজট আর কেনাকাটার ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শপিংমলগুলোর পাশাপাশি এবার ফুটপাতেও সবকিছুর চড়া দাম।

এর মধ্যেই আবার ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন পণ্য আমদানি করছেন। তাই নগরীর বড় বড় শপিংমল, মার্কেট, ফুটপাত—সবখানে বেড়েই চলেছে ভিড়। ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জিপাড়াতেও। নতুন পোশাক ফিটিং ও তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

সরেজমিন দেখা যায়, জিন্দাবাজার এলাকার সিটি সেন্টার, ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, কাজী ম্যানশন, আল-হামরা শপিং সিটি, শুকরিয়া মার্কেট, সিলেট প্লাজা, আহমদ ম্যানশন, মিতালী ম্যানশন এবং বন্দরবাজার এলাকার হাসান মার্কেট ও মধুবন সুপার মার্কেটে ক্রেতার ব্যাপক ভিড়। একইভাবে আড়ং, মাহা, চন্দ্রবিন্দু, কুমারপাড়া ও লামাবাজার এলাকা, মহাজনপট্টি এলাকার পোশাকের পাইকারি বাজারও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। তবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা পড়েছেন চাপে।

বর্ণিল ও বাহারি আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে বিপণিবিতানগুলো। দুপুরের পর থেকেই ক্রেতারা বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। ইফতারের ভিড় বাড়তে থাকে। রাত যত বাড়ে, ক্রেতাদের উপস্থিতিও তত বাড়ে। সাত দিন ধরে রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিপণিবিতানগুলোতে কেনাকাটা চলছে। পাশে মেশিনে বসে সমান তালে কাজ করছেন কারিগররা। কখনো প্যান্ট-শার্ট, সালোয়ার-কামিজ আবার কখনো পাঞ্জাবি তৈরিতে মেশিনে অবিরত চলছে খরখর শব্দ।

কারিগররা কালবেলাকে বলেন, পছন্দের এসব পোশাক চাঁদ রাতের আগেই ডেলিভারির স্লিপ দেখে বুঝিয়ে দিতে হবে, তবেই স্বস্তি। নইলে মালিকের বকুনি আর ক্রেতার ধমকানিতে মাটি হয়ে যাবে ঈদ। তাই রাত-দিন একাকার করে কাজ করে যাচ্ছি।

ক্রেতারা জানান, এবারও মেয়েদের কাছে থ্রিপিস ও লেহেঙ্গা এবং নারীদের কাছে শাড়ির চাহিদাই শীর্ষে আছে। পুরুষ কিংবা তরুণদের মধ্যে পাঞ্জাবি-পায়জামা, ফতুয়া ও শার্ট, টি-শার্ট, জিনস প্যান্টের চাহিদা রয়েছে। তরুণীরা দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের পাশাপাশি পাকিস্তানি ও ভারতীয় লেহেঙ্গা ও থ্রিপিস ক্রয় করছেন। তার বাইরে জুতা ও কসমেটিকস কিনতেও ভিড় জমাচ্ছেন তারা।

শুকরিয়া মার্কেটে ঈদের বাজার করতে আসা আফসানা জান্নাত মিম বললেন, গত বছর যে জামা ১ হাজার ৮০০ টাকায় কিনেছিলাম, এবার সেটার দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু ভাইবোনের জন্য ঈদে তো কিছু না কিনে পারি না।

দোকান মালিকরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। সে কারণে কাপড়সহ অন্যান্য পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ আজিজুল করিম বলেন, আমরা লাভ করছি না। দোকান খরচ, কর্মচারীর বেতন দিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে।

শুধু দাম নয়, যানজট আর ভিড়েও ভোগান্তি বাড়ছে। সন্ধ্যার পর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক এলাকায় পা রাখার জায়গা নেই। কুমারপাড়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বাজার করতে আসা স্কুলছাত্র আহসান সাদিক বলে, প্রথম ঈদের বাজার করতে এসে খুব মজা লাগছে। রাস্তায় এত মানুষ, হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে।

ব্লু-ওয়াটার শপিং কমপ্লেক্সে জুতা কিনতে আসা রিমা বেগম বলেন, ঈদের কেনাকাটা প্রায় সব শেষ। শুধু কসমেটিকস ও জুতা কেনা বাকি ছিল। কিন্তু যানজট ও মানুষের ধাক্কাধাক্কাতি আরও শপিং করার শখ মিটে গেছে।

চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশন ও মাহা ফ্যাশনের মতো দোকানগুলোতে দেশি পোশাকের বিক্রি বেড়েছে। ভারতীয় পণ্য কম থাকায় পাকিস্তানি ও দেশি ব্র্যান্ডই এখন ক্রেতাদের ভরসা।

মাহা ফ্যাশনের ম্যানেজার জানান, এবার কাতান, বেনারসি আর মাস্তানি ড্রেস বেশি চলছে।

সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাজার তত জমে উঠছে। ইফতার শেষে দোকান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেশি থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তায় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরপরও সবাইকে সাবধান থাকতে হবে যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ তৎপর। অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রতিটি মার্কেট, মলে সাদা পোশাকে পুলিশ রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।

সব মিলিয়ে দাম বাড়লেও সিলেটের ঈদবাজারে উৎসবের আমেজ পূর্ণমাত্রায়। কেউ বলছেন, না কিনে উপায় নেই। আবার কেউ বলছেন, অর্থনৈতিক চাপ সত্ত্বেও ঈদ মানে আনন্দ। আর সেই আনন্দের জন্যই ব্যস্ত নগরী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদে নিরাপত্তা হুমকি নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কিশোর পলাশ ও ক্ষ্যাপার ‘যামুগারে পাগলা’

আব্দুল জব্বারকে নিয়ে যা বললেন আসিফ আকবর   

প্রশিক্ষণ দিলেন মিলা 

এবার রোজায় দ্রব্যমূল্যে সন্তুষ্ট ৯৫ শতাংশ মানুষ

ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীর ধর্ষণচেষ্টার মামলা

ঈদযাত্রায় যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত 

সরকার পতনে জবির ৫ শিক্ষক-কর্মকর্তার বেতন বন্ধ

পদ্মা সেতুতে ১২ ঘণ্টায় টোল আদায় ২ কোটি টাকা

অস্ত্র খুঁজতে গিয়ে মিলল শতাধিক বস্তা ব্যালট পেপার

১০

যেসব কারণে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় 

১১

গাইবান্ধায় ট্রাক্টর-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২

১২

ঈদ করতে গ্রামে গিয়ে বাসচাপায় প্রাণ গেল শিশুর

১৩

চীনের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে 

১৪

চুরির অপবাদে শিশু নির্যাতন, গ্রেপ্তার ২

১৫

কুমিল্লায় অস্ত্র ও ইয়াবাসহ ২ ভাই গ্রেপ্তার

১৬

চকলেটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণচেষ্টা, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

১৭

চোট কাটিয়ে মায়ামির হয়ে মেসির মাঠে ফেরার ইঙ্গিত

১৮

মুক্তি পেয়েছে জয়ার ‘জিম্মি’

১৯

স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে ঘরে তালা দিয়ে পালালেন স্বামী

২০
X