পঞ্চগড়ের বোদায় জমি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষে জড়িত অভিযোগে দুপক্ষের অন্তত ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুরে উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের চিড়াকুটি-আরাজি শিকারপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বোদা থানার ওসি আজিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আহত ব্যক্তিদের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাফিজুল ইসলাম (৩২) নামের একজনের শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া মাসুদ রানা (২৬), আবদুর রহিম (৫৫) ও জুয়েল (৪৫) নামের তিনজনকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, চিড়াকুটি-আরাজি শিকারপুর এলাকার কলেজ শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম ও তার ভাই সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী বানিয়াপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমান, ইসমাইল হোসেন, হামিদুল ইসলাম, সামিউল ইসলামসহ গ্রামের আরও কয়েকজনের প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এসব ঘটনায় একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। গত বুধবার এসব জমি দখলে নিতে তরিকুল ইসলাম, মফিজুল ও নজরুল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশকিছু ভাড়াটে লোক নিয়ে এসেছিলেন। এসব ভাড়াটে লোকজন দুটি ট্রাক্টর নিয়ে ভুট্টাক্ষেত ও বাদামক্ষেতে চাষ দিতে যান। এ সময় তারা ওই জমিতে জিয়াউরদের তোলা একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন এবং ইসমাইল ও জিয়াউরকে মারধর করেন।
স্থানীয়রা আরও জানায়, একপর্যায়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কয়েকজন মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে ইসমাইল-জিয়াউরদের পক্ষ নিয়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী নজরুল ও মফিজুলদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কলেজশিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়িঘরে তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। এখন আমাদেরকেই উল্টো ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জিয়াউর রহমানের ভাজতি রমিলা বেগম বলেন, সকাল থেকেই তরিকুলদের বাড়িতে মোটরসাইকেল নিয়ে অনেক ভাড়াটে মানুষ আসে। তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিরোধ জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করতে গেলে আমাদের লোকজন তাতে বাধা দেয়। তখন তারা আমাদের লোকজনকে বেধড়ক মারধর করে। জিয়াউর ও ইসমাইলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রংপুরে পাঠানো হয়েছে। তারা নিজেদের ঘরবাড়িতে নিজেরাই আগুন দিয়ে অন্যদের দোষারোপ করছে। মূলত তরিকুল আওয়ামী লীগের নেতা তার ছোট ভাই আতাউর ছাত্রলীগের নেতা। তারা আওয়ামী লীগের সময় সাধারণ মানুষের নামে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
এ ঘটনায় দুপক্ষের অন্তত ২২ জনকে আটক করেছে বোদা থানা-পুলিশ। এ ছাড়া মফিজুল ইসলামের পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে জমি চাষ করতে আনা দুটি ট্রাক্টর ও ভাড়াটে লোকজনের অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
বোদা থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জনকে আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। এদের মধ্যে কারা কোন পক্ষের, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন