নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ শাসনামলে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছেন বহুবার। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনো থেমে নেই আজাদ চেয়ারম্যানের অপকর্ম।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আজাদ হোসাইনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তাহিরপুর উপজেলার কোনারচরা গ্রামের বাসিন্দা ও সওজ ঠিকাদার মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাহতাবপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান তালুকদারের ছেলে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বালিজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন, একই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের ঝন্টু কুমার দাসের ছেলে জেনসেন দাস, বাদাঘাট বাজারের রবি দাসের ছেলে ও সিলেট আম্বরখানার হোটেল ক্রিস্টাল রোজের সিইও নিশু দাস, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা পারভেজ ও সিলেট নগরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা জয়দেব পার্থ।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বালিজুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজাদের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান আজাদ ২০০৯ সালের আগে ছিলেন বেকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বদলে যায় তার ভাগ্য।
সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, খামার, পেট্রোল পাম্পসহ বিপুল সম্পদ। স্ত্রীর নামে কিনেছেন ৫০ একর জমি। সেগুনবাগিচায় রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
অভিযোগ রয়েছে, আজাদ হোসাইন হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে তাহিরপুরে স্থাপন করেছেন পাথর ভাঙার ক্রাশার মিল। নিয়ন্ত্রণ করছেন জলমহাল ও বালুমহাল। এক সময়ের বেকার আজাদ এখন স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং একটি হ্যান্ডলিং কোম্পানির পরিচালক। তার বিরুদ্ধে রেলপথে নিয়োগের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, কালো টাকার গুঞ্জনসহ রয়েছে আরও নানা অভিযোগ।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে কোনো সরকারি ঠিকাদারি কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাগ দিতে হতো সাধারণ ঠিকাদারদের। দলীয় নেতাদের সঙ্গে কাজের অংশীদারত্ব ভাগাভাগি কিংবা কাজ বিক্রি করে দেওয়া ছিল অলিখিত আইন। নইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যেত না। বিভিন্ন ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করত তৎকালীন সরকারদলীয় নেতারা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের এপ্রিলে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় বদরুল ইকবাল লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় নগরীর ঠিকাদার শফিকুল ইসলামকে। আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ ওই ঠিকাদারি কাজের অংশীদার হতে শফিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। সেসময় শফিক বাধ্য হয়ে আজাদকে অংশীদার করেন। সম্প্রতি আজাদ পুরো কাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
গত বুধবার দুপুরে শফিকুলকে ফোন করে নগরীর আম্বরখানা এলাকার ক্রিস্টাল রোজ হোটেলে ডেকে নেন আজাদ। সেখানে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে কাজের অংশীদারত্ব ছেড়ে দিতে শফিককে চাপ দেন তিনি। এতে অস্বীকৃতি জানালে শফিককে গালাগাল ও মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্তদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক, দলীয় কর্মী মিল্টন এবং হোটেল মালিক নিশু দাস। তবে এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মন্তব্য করুন