নওগাঁর মান্দায় ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ-ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা চালের বস্তা বিতরণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপজেলার অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিনামূল্যে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল বিতরণের বস্তায় এ স্লোগান দেখা যায়।
অভিযোগ উঠেছে খাদ্য কর্মকর্তার খামখেয়ালি মনোভাবের কারণে এরকম একটা বিতর্কিত কাজ করা হয়েছে।
জানা গেছে, অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিনামূল্যে ১০ কেজি ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল বিতরণের জন্য খাদ্য গুদাম থেকে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে পাঠানো হয়। প্রায় সবগুলো চালের বস্তার ওপরেই চোখে পড়ছে এ স্লোগান।
সরেজমিনে ১৭ ও ১৮ মার্চ দেখা যায়, উপজেলার প্রসাদপুরে ২ হাজার ৬ জন, বিষ্ণুপুরে এক হাজার ৮৫২ জন ও কাশোঁপাড়া ইউনিয়নে ২ হজার ৪৪ জন অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু খাদ্য গুদাম থেকে পাঠানো ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তায় ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগান দেখা যায়। অবশ্য মাঝে মাঝে দু-একটি বস্তায় শেখ হাসিনার নাম কালো কালির স্প্রে দিয়ে দায়সারাভাবে ঢেকে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করা হলেও তাতে ফল হয়নি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে স্লোগানটি।
জানা যায়, পটপরিবর্তনের পর বিতরণকৃত চালের বস্তায় লেখা ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ-ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এ স্লোগানটি সারাদেশে ব্যবহার না করা এবং কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরিবর্তন বা কালো কালি ব্যবহার না করেই সেই বিতর্কিত লেখা চালের বস্তা পাঠানো হয়েছিল স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদে। অবশ্য শেখ হাসিনা সরকারের সময় বিতরণকৃত সকল বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান লেখা ছিল।
এদিকে মন্তব্য নেওয়ার জন্য দুদিন ঘুরেও মন্তব্য দেননি খাদ্য কর্মকর্তা এমরান। উল্টো দাম্ভিকতা দেখিয়ে অজুহাত দেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে। তবে মৌখিক অনুমতি দিলেও হবে না, তাকে দিতে হবে লিখিত অনুমতি। একসময় তিনি বলেন- আমার কোনো বক্তব্য নেই, আপনারা যা পেয়েছেন সেটা লিখতে পারেন।
মান্দা উপজেলা মহিলা দলের সহসভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. আসমা খাতুন কালবেলাকে বলেন, এই ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল বিতরণ কর্মসূচি দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু বস্তায় হাসিনার যে স্লোগান লেখা দেখা যাচ্ছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। দেশ থেকে হাসিনা বিতাড়িত হলেও এখন পর্যন্ত তার প্রেতাত্মা ও দোসররা বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রসাদপুর ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার মো. নাজমুল হুদা কালবেলাকে বলেন, আমি ইউএনও অফিসে এসেছি। বিষয়টি খাদ্য কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে। এটি ভুল বোঝাবুঝির কারণ। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
প্রসাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন কালবেলাকে বলেন, আমি চালের বস্তায় স্লোগান সংবলিত লেখাটি দেখতে পেয়ে হতভম্ব হয়েছি। এসব গাফিলতি স্বয়ং জেলা ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার। এ ছাড়া পিআইও'র পাশাপাশি ইউএনও কেউ এর দায়ভার এড়াতে পারেন না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, এই বিষয়ে আমার কোনো দায় নেই। আমার কাজ শুধু বরাদ্দের ডিও দেওয়া। আর খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কীভাবে কোন বস্তায় চাল দেবেন সেটা তার ব্যাপার।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ফরহাদ খন্দকারের মুঠোফোনে একাধিকজ ফোন দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
একইভাবে ফোন রিসিভ করেননি মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া।
মন্তব্য করুন