দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রানীক্ষেত রোগে এক মাসে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি মারা গেছে। ওষুধ দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না মুরগির মৃত্যু। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার ১১৫ খামারি ও কয়েক হাজার গৃহস্থ পরিবার।
উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের খোড়াখাই গ্রামের সৈকত এগ্রো ফার্মের মালিক শাহিনুর ইসলাম জানান, এই সপ্তাহের শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত তার খামারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ৩ হাজার মুরগি মারা গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। চন্ডিপুর ইউনিয়নের দারারপাড় গ্রামের কিবরিয়ার খামারে ১০ দিন আগে মারা যায় ২ হাজার মুরগি। তিনি বলেন, ওষুধ ব্যবহারেও কাজ হচ্ছে না।
মুরগি কেন মারা যাচ্ছে- স্পষ্ট ধারণা নেই মন্মথপুর ইউনিয়নের খামারি আফজাল হোসেনের। তিনি বলেন, এটা রানীক্ষেত রোগ হতে পারে। আমার খামারে প্রায় ৩ লাখ টাকার এক মাসের (সোয়া কেজি ওজন) ২ হাজার ৫০০ মুরগি মারা গেছে। ঈদে মুরগিগুলো বিক্রি করব বলে আশা ছিল।
মোমিনপুর ইউনিয়নের হয়বৎপুর চকজয়দেবপুর গ্রামের খামারি মশিউর রহমান বলেন, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ৯০০ মুরগি ছিল। এর মধ্যে গত তিন দিনে ৫০০ মুরগি মারা গেছে। রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগি প্রথমে ঝিম ধরে থাকে। এরপর মারা যায় বলে জানান তিনি। তার লোকসানের অঙ্ক প্রায় দেড় লাখ টাকা। পার্বতীপুর শহরের রুস্তম নগর মহল্লার খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, এক মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার ২ হাজার মুরগি মারা গেছে। সব ধরনের ওষুধ দেওয়ার পরও কাজ হয়নি। হাবড়া ইউনিয়নের চৌপতির বাসিন্দা মিঠু মিয়ার খামারে সপ্তাহখানেক আগে ২ হাজার মুরগি মারা গেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
রামপুর ইউনিয়নের পূর্ব হুগলিপাড়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার ২৫ দিনের ৬০০ মুরগি, একই গ্রামের খামারি ওবায়দুল হকের ৩০০, হামিদপুর ইউনিয়নের খামারি মোজাহারুল হকের ৭০০, মোমিনপুর ইউনিয়নের হাজির মোড় বেলতলীর ইমরান আলীর ৬০০, মন্মথপুর ইউনিয়নের চড়কডাঙ্গার তসলিম উদ্দিনের ১ হাজার ১০০ ও পৌর শহরের ছোট বৃত্তিপাড়ার লুৎফর রহমানের এক হাজার মুরগি মারা গেছে। গত ১৫ দিনে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী ডাঙ্গা গ্রামে এই রোগে বাড়িতে পোষা মুরগি, ডিম দিচ্ছে এমন, ছোট বাচ্চাসহ ৫ শতাধিক মুরগির মৃত্যু হয়েছে।
রানীক্ষেত রোগের বেশ কিছু লক্ষণ আছে। এতে আক্রান্ত মুরগি প্রথমে ঝিমাতে থাকে। তারপর এক-দুই দিন অসুস্থ থেকে মারা যায়। কালিকা বাড়ি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সুমন সরকার জানান, গত ১০ দিনে তার ৪০ থেক ৫০টি মুরগি মারা গেছে। একই গ্রামের গৃহিণী খতেজা বেগম বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগিগুলো হঠাৎ মারা গেছে। বড় ও ছোট মিলে ৫০ থেকে ৭০টি মুরগি ছিল। পৌরশহরের নয়াপাড়া গ্রামের সাদেক আলী জানান, ২০ দিন আগে বিভিন্ন বাড়িতে প্রায় ৩০০ মুরগিসহ আমার ৪০টি মারা গেছে।
পার্বতীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান বলেন, রানীক্ষেত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি প্রতিরোধে সঠিক ভ্যাকসিন ও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হয়। সময়মতো উন্নত মানের ভ্যাকসিন ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার সম্ভব। প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে পর্যাপ্ত রানীক্ষেতের উন্নত ভ্যাকসিন আছে। তবে, উপজেলায় এক মাসে কী পরিমাণ মুরগির মৃত্যু হয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান পার্বতীপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে নেই বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন