ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটের লোকাল ট্রেনটি গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৮০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ওই রুটের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ এবং ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় মোহনগঞ্জ থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেসে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছে যাত্রীরা।
লোকাল ট্রেনের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বিনষ্ট হচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী সেবা। আবার অধিকাংশ যাত্রীকেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে সিএনজি, বাসে করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জের প্রায় ২৫টি উপজেলার মানুষ এই ট্রেনে যাতায়াত করত, ট্রেনটি বন্ধ থাকায় তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন লোকাল ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
যাত্রীদের প্রত্যাশা পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই লোকাল ট্রেনটি চালু করা হোক।
গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটে ৮০ দিন ধরে লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। ট্রেনটি চালু হতে আরও কিছুদিন লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মোহনগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. আতাউর রহমান জানান, ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় লোকাল ট্রেন বন্ধ। ইঞ্জিন মেরামতের জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। দ্রুত ইঞ্জিন মেরামত করে পাঠানোর জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ঠিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, বিকল হওয়া ট্রেনটি প্রতিদিন ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ভোর ৫টা ৪০ মিনিট এবং দুপুর ২টা ১০ মিনিটে পণ্য বহনকারী বগি এবং যাত্রীবাহী ৫টি বগি নিয়ে মোহনগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসত। কিন্তু গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনটি আসা-যাওয়া করছে না। এর ফলে নেত্রকোণা জেলা শহরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলার ট্রেনযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ জংশন স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের ৬৮ দশমিক ৫ কিলোমিটারের মধ্যে শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন, হিরণপুর রেলওয়ে স্টেশন, চল্লিশা রেলওয়ে স্টেশন, নেত্রকোণা সাতপাই বড় রেলওয়ে স্টেশন, নেত্রকোণা কোর্ট রেলওয়ে স্টেশন, ঠাকুরাকোণা রেলওয়ে স্টেশন, বারহাট্টা রেলওয়ে স্টেশন ও অতিথপুর রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিদিন প্রায় দুই তিন হাজার মানুষ এ ট্রেনে যাতায়াত করতো।
মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াতকারী আরিফুল ইসলাম পিয়াস বলেন, আমি নেত্রকোনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী, আমরা প্রতিদিনই এই ট্রেন দিয়ে যাতায়াত করতাম আমাদের কলেজে কিন্তু এটা বন্ধ থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি। বাসমালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে ইঞ্জিল বিকল এর অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে লোকাল ট্রেনটি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত পুনরায় ট্রেনটি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।
অন্য এক যাত্রী অপূর্ব আক্তার বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ি মোহনগঞ্জ। নেত্রকোনা থেকে প্রায়ই যাতায়াত হয় সেখানে। আগে লোকাল ট্রেনে সকালে গিয়ে বিকেলে চলা আসা যেত। ৭ টাকা, ৭ টাকা ১৪ টাকার টিকেট কেটে আপ-ডাউন করা যেত আর এখন সিএনজিতে ১২০ টাকা করে ২৪০ টাকা লাগে। এতে করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, সময় নষ্টের সাথে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ইঞ্জিন সংকট বা স্বল্পতার অজুহাতে এতদিন সময় লাগার কথা না। রেলওয়ে উপদেষ্টা সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে, আমলে নিয়ে ঈদের আগে অন্যান্য ট্রেনের মতো ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রুটে লোকাল ট্রেনটি চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন