কুমিল্লা নগরীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নিহত ইমরান হোসেন (২১) নামের এক তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন। পরে বিষয়টি চার লাখ টাকায় দফারফা করা হয়।
স্বজনদের সঙ্গে দফারফার একটি কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর চিকিৎসায় তাদের কোনো অবহেলা বা ত্রুটি ছিল না।
রোববার (১৬ মার্চ) রাতে কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় ট্রমা সেন্টার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইমরান হোসেন কুমিল্লা নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুর দক্ষিণপাড়া সর্দার বাড়ির প্রবাসী হুমায়ুন কবিরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দর্জি ছিলেন।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার (১২ মার্চ) অ্যাপেন্ডিসাইটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসক আতাউর রহমানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হন ইমরান হোসেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শুক্রবার সকাল ১০টায় অস্ত্রোপচার শুরু হয়। চলে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত। ২৪ ঘণ্টা পর পরদিন সকাল ১০টায় তার জ্ঞান ফিরলেও পরবর্তী সময়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। দ্রুত তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) নেওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় ইমরানের।
তবে স্বজনদের অভিযোগ, মৃত্যুর বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়নি। এমনকি বারবার চেষ্টা করেও রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সবশেষ রোববার (১৬ মার্চ) বিকেলে জোর করে আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর কোনো সাড়া শব্দ নেই। এসময় সেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা বলেন, রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। এরপর তারা লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যান। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি। এক পর্যায়ে জানা যায়, ইমরান মারা গেছেন।
এদিকে ইমরানের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও রোগীর স্বজনরা। ভাঙচুর করা হয় হাসপাতালের চেয়ারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির দুটি ভবনের বেশিরভাগ অংশের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে সরে পড়েন ডা. আতাউর রহমানসহ বেশিরভাগ চিকিৎসক ও দায়িত্বরত কর্মীরা। খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ এবং পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে নিহত ইমরান হোসেনের চাচা জাকির হোসেন বলেন, ভাতিজার চিকিৎসার পেছনে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছিল, অপারেশন খরচ ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। যখন ভর্তি করি, তখন বলেছিল ঢাকা থেকে বড় সার্জন এসে অপারেশন করবে। কিন্তু তারা কুমিল্লার ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করিয়েছে। তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
মা নাজমা আক্তার বলেন, আমার ভালো ছেলে হাসপাতালে গিয়েছে। ডাক্তার বলেছে ছোট অপারেশন। আজ আমার ছেলেকে বাড়িতে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। ডাক্তার আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ছফিউল্লাহ বলেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক নয়। অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রোগীর বড় ধরনের সমস্যা ছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচানোর জন্য।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু না হলে রোগীর স্বজনদের কেন চার লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবিক বিবেচনায় সবার উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে পারবো না।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষই অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রেজা সরোয়ার কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
মন্তব্য করুন