খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের আলোচিত চরমপন্থি নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল গত ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর। পুলিশের তালিকাভুক্ত খুলনার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হুজি শহীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারীসহ একাধিক হত্যার মামলা বিচারাধীন ছিল।
এ ঘটনার ১০ বছরের মাথায় হত্যা মামলার দুই আসামিকে একই স্টাইলে দুটি গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানিকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে হুজি শহীদের ভাইপো শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু স্বীকার করেন চাচা হত্যার বদলা নিতেই তিনি নিজে টিপুকে হত্যা করেছেন।
কাউন্সিলর টিপু হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামি। তবে ওই হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ছয় দিনের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আরেক চরমপন্থি নেতা ও হুজি শহীদ হত্যা মামলার অপর এক আসামি শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীনকে (৩৮)।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা সদর থানাধীন বাগমারা এলাকায় মাথায় পর পর দুটি গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।
তিনি শাহীন কামাল হিসেবেই বেশ পরিচিত। চরমপন্থি নেতা শাহীন কামালের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বিভিন্ন সূত্রে।
খুলনা সদর থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম কালবেলাকে বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা বাগমারা ব্রিজের কাছ থেকে রাস্তার ওপর গুলিতে নিহত শাহীনের লাশ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান। রোববার লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে কে মামলা করবে সেটি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত জানাতে পারেননি ওসি। তবে তিনি তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো গ্যাং জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যেটি পরে জানানো হবে।
তবে নিহত শাহীন নগরীর দৌলতপুর থানাধীন কার্তিককুল এলাকার বাসিন্দা হলেও ওই রাতে কেন তিনি ২৫ কিলোমিটার দূরের বাগমারায় আসলেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। যদিও এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলেন, হয়ত কোনো বন্ধু-বান্ধবের কথা অনুযায়ী তিনি এখানে এসেছিলেন। আবার হত্যাকারীদের ফাঁদেও পড়তে পারেন তিনি। যেমনটি হয়েছিল কাউন্সিলর টিপুর ক্ষেত্রেও।
কক্সবাজারে এক নারীর সঙ্গে গিয়ে হোটেলে উঠেছিলেন টিপু। সঙ্গে ছিলেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আর এক পতিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালু। এ ঘটনায় পুলিশ চালুকে তাৎক্ষণিক এবং পালিয়ে যাওয়া সেই নারীসহ তিনজনকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে। যারা সবাই এখনও কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন বলে কক্সবাজার থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। টিপু হত্যার পাঁচদিনের মাথায় সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কেসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম আকনের মেয়ে ঋতু (২৪), একই এলাকার জামাল শেখের ছেলে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭) ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দার সরদার অদুদের ছেলে গোলাম রসুল (২৫)। ওই তিনজনের মধ্যে ঋতু ছদ্মবেশে টিপুর সঙ্গে কক্সবাজারে গেলেও পাপ্পু ও গোলাম রসুল একই সঙ্গে ছিলেন এবং পাপ্পু নিজেই গুলি করে তিনজন একসঙ্গেই সিলেটে পালিয়ে যান বলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমাত উল্লাহ ওই সময় সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন।
খুলনার একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য বলেন, কক্সবাজারে টিপু ও খুলনায় শাহিন হত্যাকাণ্ড দুটি একই ধরনের। তবে কক্সবাজারে যে বা যারা টিপু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা সবাই কারাগারে থাকলেও ঘটনাটি একই ধরনের হলেও এ ঘটনার মাস্টার মাইন্ড একই ব্যক্তি হতে পারে এমনটিও ধারণা তার। অথবা একই পরিকল্পনার আলোকে এ দু’টি হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
খুলনা থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য না করে বলেন, তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই এখনই বলা যাচ্ছে না। শাহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা হয়েছে কি না সেটিও তিনি জানাননি। তিনি বলেন, ‘পরে সব জানানো হবে’।
মন্তব্য করুন