কুমিল্লা-নোয়াখালীর আঞ্চলিক মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প শেষ হলেও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকার ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারসহ লালমাই ও লাকসাম উপজেলার মোট ৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশে মহাসড়কটি দুই লেনই রয়ে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণে স্থানীয় লোকজনের বাধা ও ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে মামলা এবং বাইপাস সড়ক করার নামে জমি অধিগ্রহণ জালিয়াতির অপচেষ্টাই এর কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ফলে বাগমারা বাজার এলাকার সড়ক সরু হওয়ায় ৪ লেনের গাড়ি ২ লেনে চলতে গিয়ে ২৪ ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। এছাড়া বাজারটির সড়কেই রয়েছে কমপক্ষে ৫টি সিএনজি অটো রিকশার স্ট্যান্ড। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা নামার কারণে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। যানজটের কারণে ৩ মিনিটের সড়কটি পার হতে বেশিরভাগ সময় ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে।
যানজট নিরসন, জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সড়ক সম্প্রসারণ করে ফোর লেন বাস্তবায়নের দাবিতে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাজারের ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।
রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে উপজেলার বাগমারা বাজার জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাড়াও ফোর লেন বাস্তবায়ন পরিষদ ও সচেতন নাগরিক সমাজসহ বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।
বাগমারা বাজারের ভূমি মালিক তারেকুল ইসলাম বলেন, চার লেন বাস্তবায়ন হলে চালক, যাত্রী, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমবে। তবে ভৌগোলিক দিক থেকে বাগমারা বাজারের অবস্থান পশ্চিমে ডাকাতিয়া, পূর্বে রেললাইনের অবস্থান। তাই সব দিক বিবেচনা করে মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানাই সড়ক বিভাগের প্রতি।
উপজেলা বিএনপি নেতা মাসুদ করিম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী ও তার কিছু দোসরদের কারণে আজকে সাধারণ জনগণের এই ভোগান্তি। তিনি ও তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন লোকদের সুবিধা দিতে গিয়ে আজকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। এ সড়কে যারা প্রতিনিয়ত চলাচল করে শুধু তারাই বলতে পারবে তাদের কতটা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই আমরা আজকের এই মানববন্ধন থেকে সরকারের সড়ক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব যাতে বাগমারা বাজার অংশে দ্রুত চার লেন বাস্তবায়ন করা হয়।
মানববন্ধনে ফোরলেন বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ও বিএনপি নেতা ইউছুফ আলী মীর পিন্টু বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার অংশের আজকের যানজটের সমস্যা ২০০৩ সালে সমস্যাটি অনুমান করতে পেরেছিলেন সাবেক এমপি মনিকরুল হক চৌধুরী। তিনি তখন বাগমারা বাজার অংশে সড়কটি সম্প্রসারণ ও অবৈধ দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন। সড়ক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে তিনি তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী মরহুম নাজমুল হুদাকে দিয়ে বাগমারা উত্তর বাজারে পুরাতন ব্রিজটি ভেঙ্গে পূর্ব অংশে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করান। তখন সওজের উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কের পূর্ব পাশের সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হয়। ওই সময়ে সড়কের পশ্চিমপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে কিছু দখলদার ও ভূমি মালিক হাইকোর্টে রিট করলে উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, গত ২০১৭-১৮ সালে কুমিল্লা (টমছমব্রীজ) থেকে নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪ লেনে উন্নীত করণ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করলে বাগমারা বাজার অংশের সৈয়দপুর ও উত্তর অশ্বথলা মৌজার ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিলে পূর্বের বিরোধিতাকারী পক্ষটি আবারও কার্যক্রমটি থামিয়ে দেয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের এপিএস কেএম সিংহ রতন, তার ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার ও ভাতিজা কামরুল হাসান শাহীনের অপতৎপরতায় জনৈক সুমন বাবু ৪ লেন সড়কটি বাজারের পূর্ব পাশে (রেল লাইনের পশ্চিমে) নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে।
তিনি বলেন, সেই চক্রটি নতুন প্রস্তাবিত স্থানে ফোর লেন সড়কটি করতে সাবেক মন্ত্রীর ডিও লেটার ব্যবহার করে এবং নতুন প্রস্তাবিত স্থানে কম মূল্যে জমি কিনে অধিগ্রহণ জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের বিপুল অর্থ লুটপাটের প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমাদের নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর নির্দেশে আমরাসহ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী সড়ক বিভাগ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেই। নতুন স্থানে সড়ক নির্মাণে জনঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা ও অধিগ্রহণ জালিয়াতির কারণে একটি বিশেষ হস্তক্ষেপে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
অধ্যাপক তারেকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষকদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর সরদার, সদস্য তোফায়েল মজুমদার, বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির প্রস্তাবিত আহ্বায়ক আব্দুল খালেক, বিএনপি নেতা আসলাম মজুমদার, গাজী মুহিবুল্লাহ, ওসমান গনী রিংকু, মফিজুল ইসলাম খন্দকার, আমির হোসেন, ফরিদ মিয়া, মনির হোসেন ডালিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য মানিক মিয়া, যুবদল নেতা আলেক হোসেন, বেলায়েত হোসেন সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা ফজলুর রহমান মিন্টু, মাসুদুর রহমান, ছাত্রদল নেতা কামরুল হাসান লোকমান, হাবিবুর রহমান, শ্রমিকদল নেতা সোলাইমান প্রমুখ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী চার লেন প্রকল্পের আওতায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনটি এলাকার মধ্যে বাগমারা বাজার একটি। তবে বাগমারা বাজার অংশটি ফোর লেনে সম্প্রসারণ করতে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা কালবেলাকে বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। তারপরও বাগমারা বাজারের যানজট আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। মানববন্ধনের দাবিটি যৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ১৬ মার্চ ২০২৫ 
