বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এ রায়ে সন্তোষ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে হাইকোর্টের রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল পর কুষ্টিয়া শহরের নিজ বাসভবনে তিনি তার সন্তুষ্টির কথা জানান। এ সময় দ্রুত রায় কার্যকর ও পলাতক আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
জানা যায়, রায় নিয়ে সকাল থেকেই অধীর অপেক্ষায় ছিলেন আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। কখন রায় ঘোষণা হবে তা জানতে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। রায় ঘোষণার পর আবরারের ছবি ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ব্যবহারিক জিনিসপত্র নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সবাই। গণমাধ্যমে কথা বলার সময় মা রোকেয়া খাতুন বলেন, রায়ে সন্তুষ্ট তারা, তবে কোনো কিছুতেই তো আর তার ছেলে ফিরে আসবে না।
তবে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন রায় কার্যকরে কোনো বাধা নেই, সেই কারণে দ্রুত এ রায় কার্যকর দেখতে চান তারা। আর পলাতক আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি তোলেন তিনি।
এ সময় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন আবরারের মা। তিনি আরও বলেন, বুয়েটসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ রাজনীতি থাকলেই আবরারের মত ঘটনা ঘটবে, র্যাগিং থাকবে। শিক্ষা জীবন শেষ করে সব বাবা মায়ের ছেলেমেয়েকে ফিরে আসার গ্যারান্টি দিতে হবে।
এ সময় আবারার ফাহাদের দাদা আব্দুল গফুর বলেন, আসামিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। আমার মতো আর কোনো দাদার অবস্থা যেন এমন না হয়।
আবরারের চাচি মমতাজ পারভিন বলেন, আবরার আর ফিরে আসবে না। আমরা মেধাবীদের সঙ্গে এমন ঘটনা চাই না। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
আবরারের আরেক চাচি লথিফুন নাহার বলেন, আবরার আমাদের গর্ব ছিল। খুব নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে রায়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে এ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষ হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। ডেথ রেফারেন্স অনুমোদন ও আসামিদের করা আপিল খারিজ করে এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন