নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নীলাচল পরিবহনের ডিপোর চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৭টায় মিজমিজি মধ্যপাড়া মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে দুপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিপো এলাকায় অবস্থান নেয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
আহতরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব রেদোওয়ান আহমদ পাপ্পু, যুবদল কর্মী ফিরোজ, ডিপোর ফোরম্যান হাসেম মিয়া, বিল্লাল হোসেন ও ইসমাইল। তাদের মধ্যে ফিরোজ ও হাসেম মিয়া গুরুতর আহত হন।
জানা গেছে, মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকার একটি খালি মাঠে নীলাচল পরিবহনের ডিপো করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিবহনের একটি বাস পার্কিং করার সময় ধাক্কা লেগে বাইতুন নাজাত জামে মসজিদের কার্নিশ আংশিক ভেঙে যায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবুর উপস্থিতিতে মসজিদ কমিটির লোকজন ও নীলাচল পরিবহন কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসে। নীলাচল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ অথবা নিজ অর্থে মসজিদের কার্নিশ মেরামত করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু বাবু ও মসজিদ কমিটির লোকজন তা না মেনে এখান থেকে ডিপো সরিয়ে নিতে বলেন। শেষ পর্যন্ত মাস দুয়েকের মধ্যে ডিপো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব রেদোওয়ান আহমদ পাপ্পু বলেন, সমঝোতা বৈঠক শেষ হওয়ার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের ভগ্নিপতি ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশসহ ৪০-৫০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বাবুর উপর হামলা করে। ডিপোর ফোরম্যান হাসেমকে বেধড়ক পিটিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। এতে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন বলেন, আমার কোনো কর্মী-সমর্থক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। নীলাচল পরিবহনের লোকজনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু নেতাকর্মীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।
নাসিক ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ বলেন, আমার মা ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি। আমি হাসপাতালে ছিলাম। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
নীলাচল পরিবহনের ফোরম্যান হাসেম মিয়া জানান, জমির মালিককে মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাস রাখার ডিপো করা হয়েছে। বাসের ধাক্কায় মসজিদের কার্নিশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সন্ধ্যায় বৈঠকে বসা হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বাবু ও তার লোকজন আমাদের মারধর করেছে। বেশ কিছুদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের লোকজন ডিপো থেকে আর্থিক সুবিধা দিতে দাবি করে আসছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি ইয়াছিন মিয়া এ ডিপো বানিয়েছিলেন। তার ভাই আবুল হোসেন ডিপো থেকে মাসে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নিত। ৫ আগস্টের পর ডিপো দখল করেন বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন। ডিপোর ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নেয় তার সহযোগী পলাশ। এ চাঁদার টাকা নিতে চায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। তাতে পলাশের কোনো অপত্তি না থাকলেও ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের বনিবনা হচ্ছে না। কারণ তারা চাঁদার টাকা আরও বেশি দাবি করছে। তাই তারা এখান থেকে ডিপো সরিয়ে দিতে চায়। ডিপো সরে গেলে পলাশ মাসে ৭০ হাজার টাকা পাবে না। তাই তারা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, নীলাচল বাসের ধাক্কায় একটি মসজিদের কার্নিশ ভাঙাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি।
মন্তব্য করুন