একশ গজের মধ্যে বিএনপির দুই প্রধান কার্যালয়

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একশ গজের মধ্যে বিএনপির দুই প্রধান কার্যালয় স্থাপন করার অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল বিএনপির নেতারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের নির্দেশনায় ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনসহ পৌর বিএনপির বর্তমান কমিটির নেতাদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের পাশে উদ্ধবগঞ্জ বটতলা বাজারে আনুষ্ঠানিক ভাবে উপজেলা বিএনপির প্রধান কার্যালয় করেন। এর পরেই শুরু হয় রাজনৈতিক মেরুকরণ।

এদিকে উদ্বোধনের পর গত ১৩ মার্চ রাতে ঐ প্রধান কার্যালয়ের একশ গজের মধ্যে উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ফটকের সামনে সায়মা প্লাজায় পৌর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক ফারুক আহমেদ তপন কমিশনারের নেতৃত্বে সংস্কারপন্থি হিসেবে খ্যাত বিএনপি নেতা রেজাউল করিমের ছবি সম্বলিত আরেকটি প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন করেন যার সাইনবোর্ড বর্তমানে দৃশ্যমান।

এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির বাইরে গিয়ে কেউ তাদের নিজস্ব ছবি দিয়ে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে না। কেন্দ্র থেকেই সম্পূর্ণ নিষেধ আছে। একই থানায় দুটি বিএনপির কার্যালয় তাও একশ গজের মধ্যে যা খুবই বিব্রতকর।

সোনারগাঁ পৌরসভা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, সংস্কারপন্থি রেজাউল করিম কিংবা তার ব্লকের কারো থানায় ও পৌরসভায় কোনো পদ-পদবি নেই। পদ-পদবিবিহীন হয়ে তারা কীভাবে রাতের অন্ধকারে আমাদের বর্তমান কমিটির দেওয়া প্রধান কার্যালয়ের পাশেই আরেকটি কার্যালয় স্থাপন করে। সংস্কারপন্থিরা আগেও বিএনপিকে নিমজ্জিত করার চেষ্টা করেছে, এখনো বিএনপিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে মানুষের কাছে হেয় করার অপচেষ্টা করছে। আমাদের থানা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ দেওয়া হবে।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান জানান, প্রতিটি উপজেলায় একটিই প্রধান কার্যালয় থাকে। আমাদের বর্তমান কমিটিকে না জানিয়ে কমিটির বাহিরে থেকে রেজাউল করিমের ছবি দিয়ে কীভাবে এক শ্রেণির কুচক্রীমহল আরেকটি কার্যালয় স্থাপন করে। স্পষ্ট যে বিএনপির সুনামক্ষুণ্ন করতেই তারা এ ধরনের ঘৃণিত কাজ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিগগিরই এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, একই উপজেলায় বিএনপির একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তাদের কার্যালয় তো আলাদা থাকতেই পারে।

একই উপজেলায় পাশাপাশি দুটি বিএনপির কার্যালয় এবং একটি কার্যালয়ে রেজাউল করিমের ছবি কেন দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম ছাড়া যে কার্যালয় তা বর্তমান কমিটির কার্যালয়, আর ঐটা রেজাউল করিম গ্রুপের কার্যালয়।

এ বিষয়ে রেজাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে অর্ধশতাধিক মামলা খেয়েছি তবুও রাজপথ থেকে সরে দাঁড়াইনি। নেতাকর্মীদের বুকে আগলে রেখে ছাত্র জনতার আন্দোলনে মূখ্য ভুমিকা পালন করেছি। ৫ আগস্টের পর সংস্কারপন্থি খ্যাত রেজাউল করিম বিএনপির সুবিধা নিতে সোনারগাঁকে গ্রুপিং করার পায়তারা করছে। দলের পদ-পদবিবিহীন জাতীয়পার্টি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে রাতে কার্যালয় করে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে। যা খুবই বিব্রতকর। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে৷ বিষটি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শিগগিরই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব জানান, একই উপজেলায় দুইটি দলীয় প্রধান কার্যালয় কখনো থাকতে পারে না। ব্যক্তিগত কার্যালয় থাকতে পারে। আর কার্যালয়ে ছবি সম্বলিত সাইনবোর্ড দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। যারাই একটা কার্যালয় হওয়ার পর আরেকটা করেছে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।