ফুলে গন্ধ থাক বা না-থাক ফুলের সৌন্দর্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। ফুলের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনাদিকালের। ফুলের প্রতি এই অনুরাগের জায়গা থেকেই মানুষ বাগানে ও টবে নানা জাতের ফুল সংগ্রহ করে থাকে।
তবে বাগানে বা টবে চাষ করা ফুলের পাশাপাশি আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতেও ঋতুচক্রে নানারকম ফুল ফোটে। এসব ফুলও সমানভাবে আকৃষ্ট করে ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষকে। এমনই এক নয়নাভিরাম ফুল ল্যান্টানা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি রাঙিয়ে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। এ ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা-বাগড়া সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন অংশে, গ্রামীণ বিভিন্ন সড়কের দু'পাশে, গোমতী নদীর পাড়ে অযত্নে জন্মানো ল্যান্টানা গাছে ফুলের সমারোহ। এসব ফুলের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য লুফে নিচ্ছেন আসা-যাওয়ার পথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবুজের মাঝখানে ফুটে থাকা ফুলে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে অজান্তেই। ল্যান্টানা ফুলের মন ভোলানো দৃশ্য কেউ কেউ চলতি পথে থেমে গিয়ে করছেন উপভোগ। কেউ কেউ ছবি তুলছেন মোবাইল ফোনে। একই ফুলে একাধিক রঙের মিশ্রণ থাকায় ফুলটি যেন বেশি সুন্দর।
জানা গেছে, ল্যান্টানা বা পুটুস অথবা ছত্রা একটি ভারবেলা বা ভারবেনাস পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ল্যান্টানা ক্যামেরা। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা। তবে বর্তমানে এটি এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। এটি ভারতে পুটুস আর বাংলাদেশে ভূতভৈরবী নামেও পরিচিত। এটি সহজেই জন্মায় এবং পরিচর্যা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় বেগুনি হয়। কোনো কোনো দেশে ল্যান্টানা গাছ শোভাবর্ধনে সড়কের পাশে ও বাড়ির আঙিনায় রোপণ করা হয়ে থাকে। ল্যান্টানা ফুলের গুচ্ছে লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপি, সাদা ও নীল রঙের মিশ্রণ থাকে। এদের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। ফুলগুলো সাধারণত পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রং পরিবর্তন করে। তখন একই ফুলে দুই বা তিন রঙের মিশ্রণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে কারণে এ ফুল অন্য ফুল থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম।
ল্যান্টানা একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এর পাতায় ব্যাকটেরিয়ানাশক, ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক গুণাগুণ বিদ্যমান। যার ফলে মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এর পাতা, ফুল ও গাছের বিভিন্ন অংশ ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ল্যান্টানা ত্বকের অ্যালার্জি, কুষ্ঠরোগ, চিকেন পক্স, হাম, হাঁপানি, আলসার ও ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
তবে এ উদ্ভিদটিকে ভেষজ উদ্ভিদের পাশাপাশি বিষাক্ত উদ্ভিদও বলা হয়। এ উদ্ভিদের সবুজ কাঁচা ফল মানুষ এবং প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। এর ফুল, ফল এবং পাতা সরাসরি ব্যবহার করলে বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট বা লিভার ফেইলিউরের মতো সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এর পাতার স্পর্শে ডার্মাটাইটিস হতে পারে। শুধু এ উদ্ভিদ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমেই ভেষজ ওষুধ তৈরি করে মানুষের নানা রোগে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় সংবাদকর্মী গাজী রুবেল বলেন, আমাদের উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে কোথাও কোথাও চোখে পড়ে এই ফুল। একই ফুলে বিভিন্ন রঙের উপস্থিতি থাকায় ফুলটি বেশ সুন্দর দেখায়। এ ফুলের নাম জানা না থাকলেও বাগানের ফুলের সৌন্দর্য থেকে কোনো অংশে কম নয় এর সৌন্দর্য।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, ল্যান্টানা গাছের কোনো অংশ সরাসরি খাওয়া কিংবা ব্যবহার করা ঠিক নয়, কেননা এটি এক ধরনের বিষাক্ত উদ্ভিদ। তবে এর ভেষজ গুণ রয়েছে। এটিকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভেষজ ওষুধ হিসেবে মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এই উদ্ভিদটি সাধারণত নদীর পাড়, সড়ক বা মহাসড়কের পাশে ঝোপ আকারে জন্মাতে দেখা যায়। এ গাছের ফুল সুন্দর।
মন্তব্য করুন