কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে পুলিশের গুলিতে পা হারানোর ঘটনায় নাঙ্গলকোট থানার সাবেক ওসি নজরুল ইসলামসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বেলাল হোসেন মজুমদার (৫০) নামের এক ইমাম।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাদী বেলাল হোসেন মজুমদার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাম পণ্ডিত বাড়ি এলাকার আলী হায়দারের ছেলে। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করতেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সমর্থক।
মামলায় নাঙ্গলকোট থানার ওসি নজরুল ইসলামকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া নাঙ্গলকোট থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আলী, একই থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন পুলিশ কনস্টেবল সামছুল হুদা ও শাহ আলমকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নাঙ্গলকোটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুদ্দিন কালুকে আসামিও করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাদী বেলাল হোসেন মজুমদার মসজিদের ইমাম। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। একই এলাকার আব্দুল হালিমের ছেলে বেলায়েত হোসেন তার একজন অনুসারী ছিলেন। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে বেলাল হোসেনের ঘরে প্রবেশ করেন তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামের নির্দেশে এসআই বাবুল আলী, এসআই সালাউদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন পুলিশ কনস্টেবল সামছুল হুদা ও শাহ আলম। এ সময় তাকে এবং তার অনুসারী বেলায়েত হোসেনকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখা হয়।
পরে গভীর রাতে দুজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের লুধুয়া নামক স্থানে নিয়ে দুজনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে পুলিশ। একপর্যায়ে ওসি নজরুলের নির্দেশে দুজনের পায়ে গুলি করেন এসআই বাবুল আলী ও এসআই সালাউদ্দিন আহমেদ সঙ্গীয় ফোর্স। এ সময় গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পরে ভুক্তভোগী দুজনের বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের পায়ের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার তাগিদ দিলেও হেফাজতে থাকায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়া হয়নি। দুজনের মধ্যে বেলাল হোসেনের পায়ের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসক তার বাম পা কেটে ফেলেন। তাতে তিনি (বাদী বেলাল) পঙ্গু হয়ে পড়েন। অপর ভুক্তভোগী বেলায়েতের পা কাটা না হলেও তিনি যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করেন।
আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের মামলা সচরাচর কম হয়। আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন। তবে বিচারক অভিযোগটি দেখে পরে তদন্তের বা অন্য আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন