রমজান মাসজুড়ে মাগরিবের আজানের আগেই ধনী কিংবা গরিব সবাই এক কাতারে বসে যান। আজান দিলেই রোজাদারদের জন্য শরবত, ফল, ছুলা-মুড়ি থালায় থালায় বেড়ে দেন মেহমানদের।
এভাবেই বিগত ৫২ বছর ধরে পথচারীদের মাসব্যাপী ইফতার করিয়ে আসছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের মোটর মেকানিক মো. শাহাজদ্দিন (৭৭)। বর্তমানে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি গলিতে তার মোটরসাইকেল মেরামতের দোকান রয়েছে।
রমজান মাসের প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন পথচারীকে ইফতার করান মো. শাহাজদ্দিন। এর মধ্যে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ব্যাংকারসহ নানা পেশার রোজাদার ইফতার করেন এখানে। দোকানের মেঝেতে পাটি পেতে দেওয়া হয়। তাতে বসিয়ে ইফতার করান যত্ন সহকারে। রোজাদারদের আপ্যায়নে কোনোরকমের ত্রুটি রাখেন না তিনি। নিজ হাতে শরবত, ফল, মুড়ি মেখে বেড়ে দেন। সঙ্গে দুই ছেলে ও দোকানের কর্মচারীরাও তাকে সহায়তা করেন।
বুধবার (১২ মার্চ) ইফতার করতে আসা সংবাদকর্মী শাহীন বলেন, তিনি বিগত ৫ বছর ধরে এখানে ইফতার করতে আসেন। মূলত বাড়ি যেতে দেরি হলেই এখানে ইফতার করি। তা-ও বছরে দু-তিন দিন তো এখানে ইফতার করা হয়ই। মো. শাহাজদ্দিন অতিযত্ন সহকারে আপ্যায়ন করেন। তার আতিথেয়তা আমার খুব ভালো লাগে। তাই সময় পেলেই চলে আসি।
ক্রীড়াপ্রেমী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বাসা কাছেই। এখানে অনেকের সঙ্গে ইফতার করতে ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে সময় পেলেই ইফতার করি।
বুধবার প্রায় ৩০ জন ইফতার করেন মো. শাহাজদ্দিনের দোকানে। এদের মধ্যে পথচারী, সাংবাদিক, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা ছিলেন।
মোটর মেকানিক মো. শাহাজদ্দিন জানান, আমি ধনী লোক নই। আবার কিছু পাওয়ার জন্যও নয়। রোজাদারদের ইফতার করালে আমি মনে শান্তি পাই। মাঝে করোনাকালীন দুই বছর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। রোজাদার মুখগুলো দেখতে না পেয়ে মনে খুব কষ্ট পেয়েছি। এখন আয়োজন করতে পেরে আমি খুব খুশি।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে রাজধানীর বিজয় নগরে থাকাকালীন আমার মোটর মেকানিক ওস্তাদ মরহুম আব্দুস সালামকে দেখে অনুপ্রাণিত হই। সেই বছর ঢাকা থেকেই পথচারীদের মাসব্যাপী ইফতার করিয়ে আসছেন। বিগত ৫২ বছর তিনি এভাবেই প্রতি বছর রোজাদারদের নিজ হাতে ইফতার করাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন