জমির মালিকানা নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় এক হিন্দু পরিবারের রান্নাঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আশুলিয়া থানায় এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সন্তোষ ভট্টাচার্য।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিন মাস ধরে আশুলিয়া থানার ডগরতলি এলাকার মৃত আ. সবুর মিয়ার ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৬২), মো. মনির হোসেন (৬৫), মো. সানোয়ার হোসেন (৫৫), মো. সাইফুল ইসলামসহ (৫০) তাদের সহযোগীরা স্থানীয় সন্তোষ ভট্টাচার্যের দাদির নামে আশুলিয়া থানাধীন বাঁশবাড়ী মৌজায় ৩২ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। একাধিকবার তারা সন্তোষের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে চাপও সৃষ্টি করেন। পরে এ ঘটনায় মো. জাহাঙ্গীরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা ৮ মার্চ রাত ১২টার দিকে সন্তোষের বসতবাড়ির কেচিগেটে তালা দিয়ে গেটের সামনে এবং রান্নাঘরের সামনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় সন্তোষের পরিবারের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গিয়ে আগুন নেভায়।
এদিকে আগুন লাগার পর গতকাল শনিবার রাতেই ৯৯৯-এ কল দিলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আশুলিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জসীম উদ্দীন।
মো. জসীম উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঘটনাটি জানান ভুক্তভোগীরা। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। একটি তালা ও একখণ্ড জিআই তার উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এ সময় আমি কোনো আগুন দেখতে পাইনি। তবে রান্নাঘরের একপাশের কর্নারে কিছু অংশ পোড়া ও কেচিগেটের সামনে কিছু খড় পোড়া দেখেছি।
রোববার (০৯ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তোষ ভট্টাচার্যের বসতঘরের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত রান্নাঘর। রান্নাঘরের উপরের চালার একটি কর্নারের একাংশের চাটাই (আনুমানিক এক ফিট) পুড়ে গেছে।
ভুক্তভোগী সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, আমি সন্দেহ করছি আমার ঘরের সামনে যারা ঘর করেছে তারাই আমার রান্নাঘরে আগুন লাগিয়েছে। পুলিশের কাছে আমি কয়েকদিন পরপরই অভিযোগ করি কিন্তু কোনো কাজ হয় না। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি আমরা যেন সেখানে নিরাপদভাবে বসবাস করতে পারি। আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসন যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ভুক্তভোগী সন্তোষ ভট্টাচার্যের পুত্রবধূ বর্ষা ভট্টাচার্য বলেন, আমরা সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে দেখি বাহিরের রান্নাঘরে আগুন জ্বলছে। পরে কেচিগেট খুলতে গিয়ে দেখি গেটে তালা লাগানো। পরে আমরা ডাক-চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তালা ভেঙে আমাদের বের করে এবং আগুন নেভায়।
রান্নাঘর লাগোয়া সন্তোষের প্রতিবেশী মাজেদা খাতুন বলেন, আমি অসুস্থ তাই সব সময় বাসায়ই থাকি। গত রাতে কোনো আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে কিংবা কোনো হৈ-হুল্লোড় হয়েছে আমি কিছুই শুনিনি। তবে পরে শুনেছি রাতে পুলিশ এসেছিল।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানোয়াট এবং মিথ্যা। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এর আগেও তারা নানাভাবে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল থানায়। এখন আবার আগুন দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে সেটিও আমাকে ফাঁসানোর জন্য নতুন চক্রান্ত।
আশুলিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মদন চন্দ্র সাহা বলেন, এ ঘটনায় রোববার দুপুরের পর একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন