দায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং গত পাঁচ আগস্টের পর অর্জন করা বদমানের দায় নেবেন না বলে পদত্যাগ করেছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. গোলাম ওয়াহীদ হারুন।
গত ৮ মার্চ তার পদত্যাগপত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা জেলা এবং উপজেলা বিএনপিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
পদত্যাগপত্রে মো. গোলাম ওয়াহীদ উল্লেখ করেছেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিতর্কিত কর্মতৎপরতা, অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ও ইতোমধ্যে কুড়ানো দুর্নামের ভাগীদার না হবার দৃঢ় প্রত্যয়ে ৮ মার্চ থেকে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এবং অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। মেহেন্দিঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করা যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম ওয়াহীদও রাজিব আহসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পাঁচ আগস্টের পর স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে আছেন ফরহাদ অনুসারীরা।
এদিকে, গত পাঁচ আগস্টের পর থেকেই উপজেলা বিএনপির এই অংশটির বিরুদ্ধে চরের জমি দখল, গরু লুট, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি, মাটি লুটসহ চরের জমির ফসল লুটের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কোনো অভিযোগেরই তদন্ত করেনি বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি।
তবে ইতোপূর্বে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে উপজেলা, পৌর এবং ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকে সাময়িক শাস্তির আওতায় আনে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হয়নি কখনো।
অভিযোগ এবং যুগ্ম আহ্বায়কের পদত্যাগ প্রসঙ্গে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দীপেন জমাদ্দার বলেন, ২০২৩ সালের জুনে আমাদের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটির দুই নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম ওয়াহীদ। এখন পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
তিনি বলেন, গোলাম ওয়াহীদের পদত্যাগের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। ইতোপূর্বে তিনি আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্নও তোলেননি। বরং সব সময় তিনি আমাদের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। হঠাৎ করে তার এমন সিদ্ধান্ত এবং কমিটির বিরুদ্ধে অপবাদ তোলাটা অবান্তর। কেননা গোলাম ওয়াহীদ নিজেই সাংগঠনিক বা দলীয় কার্যক্রমে থাকেন না। তিনি কখনো লন্ডন, কখনোবা খুলনায় থাকেন পারিবারিক কাজে।
অপরদিকে যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম ওয়াহীদের পদত্যাগপত্র হাতে পাননি বলে দাবি করেছেন বরিশাল জেলা (উত্তর) এর আহ্বায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, গত ছয় মাস ধরে গোলাম ওয়াহীদের রাজনৈতিক কর্যক্রম আমরা দেখিনি। হঠাৎ ফেসবুকে তার পদত্যাগপত্রটি পেয়েছি। কিন্তু এটি কোনো সাংগঠনিক নিয়ম নয়। কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে অবশ্যই পদত্যাগপত্র দায়িত্বশীলদের হাতে দিতে হবে। তাছাড়া পদত্যাগপত্রে অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়টিও আমরা ক্লিয়ার নই।
তবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাদের বিতর্কিত অপতৎপরতার কথা শিকার করেছেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ পেয়েছি। যেটা সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হয়েছে। তবে এ নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। যিনি পদত্যাগ করেছেন তিনিও কখনো অভিযোগ করেনি। তার লিখিত অভিযোগ হাতে পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম ওয়াহীদ হারুন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিএনপির ৯০ শতাংশ কর্মসূচিতে আমি ছিলাম। এখন যারা নেতা দাবি করছেন তারা কোথায় ছিলেন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, গত ছয় মাস ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকার দাবি কিছুটা সত্যি। যখন দেখলাম দলের সাংগঠনিক যে উদ্দেশ্য তা থেকে আমাদের অনেক লোক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে তখন তাদের থেকে বেরি আসি। এ কারণে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে আমাকে ডাকা হয় না বা জানানো হয় না। বিষয়টি ইতোপূর্বে উত্তর জেলার আহ্বায়ক দেওয়ান শহিদুল্লাহকে জানিয়েছি। তিনি গুরুত্ব দেননি। এ কারণে দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই। যেই কমিটির নেতারা মানুষের কল্যাণের না থেকে দলের বদনাম করে নিজেদের আখের গোছায় তাদের সঙ্গে না থাকাটাই উত্তম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্তব্য করুন