কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে পছন্দের ইমামকে না রাখায় জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডে জুতা ঝুলিয়ে দিয়েছে অব্যাহতি পাওয়া ইমাম মারুফ বিল্লার অনুসারীরা। শুক্রবার (৭ মার্চ) জুমার নামাজের পর কলেজের ডিগ্রি শাখার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, জুমার নামাজের খুতবার আগে মসজিদের মিম্বরে মুসল্লিদের উদ্দেশে কথা বলেন কলেজ এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন। পূর্ব পরিস্থিতি যাতে আর না হয় আহ্বান করে তারা বলেন, ভিক্টোরিয়া একটি স্বনামধন্য কলেজ। স্থানীয়দের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরোধ কখনো কাম্য নয়। কলেজ মসজিদের অব্যাহতি পাওয়া ইমাম মারুফ বিল্লাহকে সসম্মানে বিদায় করার পাশাপাশি বর্তমান ইমামকে বাদ দিয়ে নতুন ইমাম নিয়োগ দিতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারের মাধ্যমে এমন একজনকে নিয়োগ দিতে হবে যাকে কলেজ ও মসজিদ এলাকার কেউ না চেনে। এ বিষয়ে আমরা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।
এই কথা মানেনি অব্যাহতি পাওয়া ইমাম মারুফ বিল্লার অনুসারীদের একাংশ। খুতবা চলাকালে তারা বের হয়ে যান মসজিদ থেকে। নামাজ শেষ হতেই কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা জাতীয় পতাকার তিনটি স্ট্যান্ডের মধ্যে মাঝের স্ট্যান্ডে বিভিন্ন অশ্লীল স্লোগান দিয়ে জুতা ঝুলিয়ে দেয় ৮ থেকে ১০ জন যুবকের একটি দল।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে তাবলিগের বিবাদমান দুই পক্ষ মাওলানা সাদ ও জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে গত ২০ জানুয়ারি তাবলিগের সাপ্তাহিক তালিম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা করেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাসার ভূঁঞা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধে ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেন ইমাম মারুফ বিল্লার অনুসারীরা। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমাম মো. মারুফ বিল্লাহকে নানান অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেয় কলেজ প্রশাসন। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইমামকে চাকরিচ্যুত করার পর থেকেই কলেজে সংঘর্ষ শুরু হয়।
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ বলেন, এ কেমন কাজ! ইমাম গেলে ইমাম আসবে। দোষ করলে মানুষ করছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা করল কেন? কলেজ প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অভিযুক্ত ইমাম মারুফ বিল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কলেজ প্রশাসন আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। আমি কলেজ থেকে চলে এসেছি। এখন কী ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাসার ভূঁঞা বলেন, জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডে জুতা উত্তোলন, রাষ্ট্রদ্রোহী কাজের সমান। এই কাজ কখনোই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন