সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি, অথচ উপজেলায় বিসিআইসির সারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ডিলার! স্কুলে পাঠদানের দায়িত্ব থাকলেও সেখানে অনিয়মিত, সব সময় ব্যস্ত থাকেন ব্যবসা নিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করেন একাধিক ডিলারশিপ।
তিনি হলেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সীতারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল আমিন তালুকদার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নিয়ম অমান্য করে উপজেলায় সারের বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আটপাড়ায় বিসিআইসির ৯টি সার ডিলারশিপের মধ্যে ৫টিরই নিয়ন্ত্রক এই শিক্ষক। তার নিজের নামে রয়েছে মেসার্স নূরুল আমিন ট্রেডার্স, আর ছেলের নামে সাইমুন তালুকদার ট্রেডার্স। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আরও তিনটি ডিলারশিপের মালিকানা নিজের হাতে রেখেছেন, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে পরিচালনা করেন। ফলে সেখানে সারের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তুলেছেন তিনি।
সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি চাকরিজীবী সরকারি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারেন না। কিন্তু নুরুল আমিন নিয়মের তোয়াক্কা না করেই শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুলে তার উপস্থিতি অনিয়মিত। শিক্ষকতার পরিবর্তে তিনি সার ব্যবসা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তবে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করেও কীভাবে একজন শিক্ষক এত বড় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, সে প্রশ্ন উঠেছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
শিক্ষক নুরুল আমিন পাঁচটি ডিলারশিপ পরিচালনা করেন, কোটি টাকার ব্যবসার হিসাব সামলান, ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। স্কুলে অনিয়মিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকি এবং আমার দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা অফিস সময়ের বাইরে ব্যবসা করতে পারেন, এমন নিয়ম আছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু সার ডিলারশিপই নয়, আমার মাছ ও মুরগির খাদ্যের ব্যবসাও রয়েছে। খাদ্যের ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ করার কথা ভাবছি।
তিনি বলেন, ‘এর আগেও অনেক সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেছেন, কিন্তু আমার কিছুই করতে পারেননি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়জুন নাহার নিপা কালবেলাকে বলেন, ‘নুরুল আমিন ২০০২-২০০৫ সালের মধ্যে ডিলারশিপ নিয়েছেন। ২০০৯ সালে নতুন নীতিমালা কার্যকর হলেও তিনি কীভাবে টিকে গেছেন, তা জানা নেই। তবে এতদিন আমরা জানতামই না যে তিনি একজন শিক্ষক। উপজেলায় সারের বাজারের বড় অংশ তার নিয়ন্ত্রণে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুয়েল সাংমা কালবেলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ডিলার হতে পারেন না। এটি সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত।’
মন্তব্য করুন