নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুগ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে ৬টি মোটরসাইকেল ও ৭-৮টি দোকান। সংঘর্ষে একজন গণমাধ্যম কর্মীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০-৩৫ জন আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আদমজী এলাকায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ও বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিরীর সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ, নারায়ণগঞ্জ খানপুর ও স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, সাগর গ্রুপের নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহমাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোহন, মানিক, সাবেক সিনিয়র সহভাপতি আরিফ, সদস্য মাহবুব, সবুজ, শহীদসহ ১০-১২ জন। মনির গ্রুপের আল আমিন, ইকবাল, রবিউল, হাবিব, আরমান, রাসেল, সাকিল, জনি, রতন, ফাহিমসহ ১৪-১৫ জন।
জানা গেছে, আদমজী ইপিজেডের ইউনিভার্সেল নামক গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা রাকিবুর রহমান সাগর ও ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মনির হোসেনের মধ্যে কয়েকদিন বিরোধ চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইপিজেডের ভেতরে সাগর গ্রুপের মোহনকে মারধর করে মনির গ্রুপের লোকজন। এতে দুগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে বিকেলে ৪টার দিকে মনির গ্রুপের লোকজন আদমজী ভূঁইয়া মার্কেট ও সাগর গ্রুপের লোকজন অপর পাশে কদমতলী কবরস্থান এলাকায় জমায়েত হয়। দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ উভয় গ্রুপে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ লোক একত্র হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
মারামারির খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মারধরের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ও সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবের অর্থ সম্পাদক জাকির হোসেনের মোটারসাইকেলও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে কোন গ্রুপের লোকজন সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রদল নেতা রাকিবুর রহমান সাগর বলেন, আমি বৈধভাবে ইপিজেডে ব্যবসা করে আসছি। আওয়ামী লীগের কিছু লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে মনির হোসেন আমার ব্যবসা দখল করার চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারবাহিকতায় মনির হোসেন, রুহুল আমিন, জহিরুল ইসলাম বাবু ওরফে পাবনা বাবু, মাইচ্ছা মানিক, বুইট্টা রনি, পাগলা মিজান, সম্রাট, জালাল উদ্দিন, দুলাল, সালাউদ্দিন ও খোকনসহ দুই আড়াইশ লোক আস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
সাবেক বিএনপি নেতা মনির হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই সাগর ও তার লোকজন আদমজী ইপিজেডে ঝুট ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেয়। তাকে ছাড়া অন্য কেউ ইপিজেডে ব্যবসা করতে পারছে না। দুপুরের দিকে আমার লোকজন ইপিজেডে গেলে সাগরের বাহিনী হামলা করে। পরে বিকেলে আবার আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে প্রকাশ্যে অস্ত্র বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। মার্কেটের সামনে রাখা আমাদের লোকজনের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। দোকানপাট ভাঙচুর করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর আলম বলেন, ইপিজেডের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কোনো পক্ষই এখনো থানা লিখিত অভিযোগ করেনি।
মন্তব্য করুন